কঠিন হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ পাওয়ার শর্ত

বাংলাদেশকে আগামী ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ব ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বিপরীতে দুই শতাংশ হারে সুদ গুণতে হবে।সেই সঙ্গে কমবে ঋণের রেয়াতকাল এবং পরিশোধের সময়ও।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2017, 05:04 PM
Updated : 16 Oct 2017, 05:04 PM

সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা আবাসিক কার্যালয় প্রধান চিমিওয়াও ফান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ কথা জানিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশকে ২শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। একইসঙ্গেঋণের রেয়াতকাল এক বছর কমিয়ে পাঁচ বছর আর ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৩০ বছর করা হবে।

বর্তমানে আইডিএ তহবিল থেকে বাংলাদেশ মাত্র শুন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ঋণ পেয়ে আসছে। এই ঋণে ছয় বছরের রেয়াতকাল ও ৩৬ বছরের পরিশোধের সময় পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বব্যাংকের আবাসিক কার্যালয় থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে,এটলাস মেথড অনুযায়ী মাথাপিছু আয় ১১৬৫ মার্কিন ডলারের বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ সস্তা ঋণ পাওয়ার তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, এটলাস মেথড অনুযায়ী ২০১৭ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১১৯০ ডলার আর ২০১৮ সালে তা উন্নীত হবে ১৩৩০ ডলারে। তাই ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের ব্লেন্ড থেকে ঋণ নিতে হবে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও শ্রীলংকার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যেই আইডিএ ঋণ পাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আর পাকিস্তানও ব্লেন্ড দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এখন বাংলাদেশ সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে।

তবে বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সস্তা ঋণ পাওয়ার সুযোগ শেষ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়েরপ্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকের আইডিএ তহবিল থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব দেশগুলোর জন্য ঋণ দেওয়া হয়। এটা একটা সীমিত তহবিল। এ তহবিল থেকে একটা দেশ যত ইচ্ছা ঋণ নিতে পারে না। কিন্তু আইডিএ তহবিল থেকে ঋণ নিলে যা চায় তাই পাওয়া যায়।

“আসলে বাংলাদেশকে ২০১৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের সস্তা ঋণ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে না। ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সস্তা ঋণ পাবে। সেই সাথে যদি অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয় তাহলে তা ব্লেন্ড তহবিল থেকে নিতে হবে।”

বিশ্বব্যাংকের এ অর্থনীতিবিদ বলেন, “একটা দেশ ব্লেন্ড তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার পরও বেশি সুদের ঋণ নিতে তিন বছর সময় পায়। সেই হিসাবে আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সস্তা ঋণের সুযোগ পাবে। এ সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দের বেশি অর্থ নিতে চাইলে তা ব্লেন্ড তহবিল থেকে নিতে পারবে।

“এরপর বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের আইবিআরডি তহবিল থেকে ঋণ নিতে হবে। এ ঋণের সুদ হার ৪ শতাংশের কাছাকাছি। তবে ওই সুদে বাংলাদেশের যত ইচ্ছা ঋণ নিতে পারবে।

ঋণের সুদহার বাড়াতে বিশ্ব ব্যাংকের ইচ্ছার কথা দুই বছর আগেই জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।সে সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুদের হার আরো পাঁচ-ছয় বছর পর বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়।

তবে চলতি বছরের অগাস্টে একটি প্রকল্পের জন্য পাঁচ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঋণ পেতে বিশ্ব ব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-আইডিএ’র সঙ্গে একটি ঋণ চুক্তি করে সরকার, যেখানে সুদের হার ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।