বুধবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেল নিজ দেশের ইনক্লুশন এবং ডিমনিটাইজেশনের উপর এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “যখন কোনো অর্থনীতি নগদ মুদ্রার উপর বেশি নির্ভরশীল হয়, তখন তার অভিশাপও আপনাকে ভোগাবে।
“নগদ মুদ্রাকেন্দ্রিক অর্থনীতি কর ফাঁকি, কালো টাকা ও দুর্নীতির দিকে ধাবিত করে। নগদ লেনদেন এমন অন্যান্য অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে, যেটা পুরো সিস্টেমটাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।”
নগদ মুদ্রানির্ভর অর্থনীতি কীভাবে দরিদ্রদের বিরুদ্ধে কাজ করে তার সহজ ব্যাখ্যাও দেন ভারতের এই রাজনীতিক।
এ থেকে মুক্ত হতে সে দেশের সরকার গত নভেম্বরে ডিমনিটাইজেশনের ব্যবস্থায় ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাজার থেকে তুলে নিয়েছিল।
অরুণ জেটলি বলেন, “অতিরিক্ত নগদমুদ্রা দরিদ্রদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। কারণ যেসব লোক অতিরিক্ত নগদ গচ্ছিত রাখতে পারে, তারা সরকারকে কর বঞ্চিত করতে পারে- যেটা অন্যভাবে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিতদের জন্য ব্যবহার হতে পারত।”
অপ্রদর্শিত নগদ মুদ্রা যে জঙ্গি অর্থায়নের দিকে যেতে পারে, সেই সতর্ক বার্তাও দেন ভারতের অর্থমন্ত্রী।
“নগদ টাকা অজ্ঞাতে বাজারে ব্যবহৃত হওয়ায় মালিকের খোঁজ থাকে না। ভারতের মতো দেশ, যেখানে অনেক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়ছে এবং সমর্থন পাচ্ছে এই নগদ দ্বারাই।”
ডিমনিটাইজেশনের ফলে ভারতের কী উপকার হয়েছে সেই প্রসঙ্গে অরুণ জেটলি বলেন, “কম নগদ লেনদেন এবং ডিজাটালাইজড ট্রানজেকশন বেড়েছে। আয়কর দাতাদের সংখ্যা হুট করে বেড়েছে। কারণ যারা নগদ টাকাকে করের বাইরে রেখেছিল, তারা করের অধীনে আসতে বাধ্য হয়।
“এর চতুর্থ বড় অর্জন সন্ত্রাসীরা তাদের সন্ত্রাসী অর্থায়ন সঙ্কুচিত করতে বাধ্য হয়েছে।”
ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে থাকা ৪২ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে এর আওতায় নিয়ে আসতে ভারতে সরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন অরুণ জেটলি।
“তাদের ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার পর ব্যাংকের প্রতিনিধিরা প্রত্যেক বাড়িতে যাওয়া শুরু করল এবং চেষ্টা করেছে যাতে প্রত্যেক পরিবার অন্তত একটি ব্যাংক হিসাব খোলে। ৩০ কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সক্ষম হয়েছি আমরা। যখন এই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, তখন সেগুলো ৭৮ শতাংশের কোনো জমা ছিল না।”
ওই ব্যাংক হিসাবগুলো চালু রাখার স্বার্থে মানুষদেরকে ‘কম খরচের ইন্সুরেন্স ও পেনশন নীতি’ গ্রহণের মাধ্যমে প্রণোদনা দেওয়া হয় বলে জানান ভারতের অর্থমন্ত্রী।
“আমি প্রণোদনার অংশ হিসাবে বলা হয়, প্রতি মাসে এক টাকা প্রিমিয়ামে দুই লাখ টাকা এক্সিডেন্ট পেনশন পলিসি, দুই রুপি এক মাসের প্রিমিয়ামে ২ লাখ জীবন বীমা পাবে। এর ফলে লাখে লাখে মানুষ এই পলিসি গ্রহণ করা শুরু করল।”
ভর্তুকির দেওয়ার ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনার কথা বলেন তিনি।
“সাধারণত পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এ কারণে যাদের প্রয়োজন নেই, তারা সেটা পায়। পরে ব্যাংক হিসাব ও স্বতন্ত্র পরিচিতি নম্বর দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ভর্তুকি প্রদানের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।”
ভারতের হাই কমিশন ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের কারণে এখনকার অগ্রগতি অবিশ্যাম্ভাবী। দুর্নীতি দূর করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি।”
ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড রাসকিনহা, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ওয়েবসাইট সরাসরি দেখানো হয়।