চালের দাম: খাদ্য মন্ত্রণালয় দুষল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে

আমদানি শুল্ক ‘সময়মতো একবারে’ না কমানোকে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেখিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সাজিদুল হক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2017, 02:28 PM
Updated : 3 Oct 2017, 02:43 PM

চালের দরের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই কারণ দেখানো হয়।

এর আগে গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তোপের মুখে পড়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়।

কমিটির মঙ্গলবারের বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায়, চালের দাম বাড়ানোর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে আমদানি শুল্ক সময়মতো ও এক বারে না কমানোর কারণ দেখিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

“আমদানি শুল্ক সময়মতো প্রত্যাহার না করে দফায় দফায় প্রত্যাহার করারয় রপ্তানিকারক ভারতও দফায় দফায় চালের মূল্য বৃদ্ধি করে। ফলে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা সত্ত্বেও বাজার মূল্য কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।”

এপ্রিলের শুরুতে আগাম বন্যায় হাওয়ে ফসলহানি এবং মজুদ তলানিতে নেমে আসার প্রেক্ষাপটে বাজার সামলাতে চাল আমদানিতে নজর দেয় সরকার।

গত ২০ জুন চালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি

৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়। অগাস্টে আমদানি শুল্ক আরও নামিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

তারপরও চালের দাম না কমায় সরকার মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে। এরপর পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি।

বাজারে চালের দাম কমছে না

খাদ্য মন্ত্রণালয় চালের দাম বাড়ার পেছনে মৌসুমকেও কারণ দেখিয়েছে। তারা বলেছে, সাধারণত আমন মৌসুম শেষ হওয়ার পর বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকে। বোরো মৌসুম শেষ হওয়ার পর তা আবার কমতে থাকে।

বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য শিরিন নাঈম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংসদীয় কমিটি সকল কারণ নিয়ে আলোচনা করেছে। কমিটি বলেছে, সকল সমস্যার সমাধান করে চালের দাম জনগণের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে।”

বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, চালের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটির দুজন সদস্য বলেন, নির্বাচনের আগে চালের দাম বাড়া সরকারের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। তারা এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার কথাও বলেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম চালের দাম বাড়ার কারণগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলে একজন সদস্য বলেন, মন্ত্রণালয় কী উদ্যোগ নিয়েছে বা নিচ্ছে সেটা নয়, দেখতে চাই চালের দাম কমেছে।”

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, গত ১৫ জুনের বৈঠকে চালের দাম বাড়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপর ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন কমিটির সদস্য ফজলে নূর তাপস।

তাপস বলেন, “খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ে চরম ব্যর্থতা এবং গাফিলতির কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”

কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদও চালের দাম বাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। ওই বৈঠকে কমিটির আরেক সদস্য নুরুল হক বলেছিলেন, বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ‘লেজে গোবরে’ অবস্থা।