রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সহায়তার আশ্বাস যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য আরও চার কোটি ৬২ লাখ ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2017, 12:58 PM
Updated : 28 Sept 2017, 02:29 PM

এর মধ্যে যুক্তরাজ্য সরকার ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড (৪ কোটি ২ লাখ ৭৬ হাজার ডলার) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা মিয়ানমার ও বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করা হবে। 

আর যুক্তরাষ্ট্র ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) মাধ্যমে দেবে আরও ৬০ লাখ ডলার, যা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডাব্লিউএফপি) মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ব্যয় হবে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী অ্যালিস্টার বার্টের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং ত্রাণ সচিব শাহ কামালের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থ সহায়তার বিষয়টি জানান।

মন্ত্রী মায়া পরে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাজ্য এর আগে ৫ দশমিক ৯ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিল। তারা আরও ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে এবং ভবিষ্যতেও সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

“তাদের (যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রী) বলেছি, সমস্যাটা মিয়ানমারের, তাদেরই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সম্মানের সঙ্গে তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। তারা বলেছেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে থাকবে।”

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গত ২০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে ত্রাণমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোহিঙ্গাদের জন্য দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউএসএআইডির মাধ্যমে আরও ৬০ লাখ ডলার সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে চলতি বছর রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় দশ কোটি দশ লাখ ডলারের সহায়তার ঘোষণা দিল জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাড় করা অর্থ ইউএসএআইডি বিভিন্ন কর্মসূচির  মাধ্যমে কক্সবাজারে ব্যয় করা হচ্ছে।

কয়েক দশক ধরে চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে গত ২৫ অগাস্টের পর থেকে আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার আশ্রয়, খাবার ও অন্যান্য জরুরি সহায়তার বিষয়টিকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ।

বাংলাদেশ সরকার আপাতত আশ্রয় দিলেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

ব্রিটিশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ত্রাণমন্ত্রী মায়া সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে ১০ লাখের মত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। মানবিক বিবেচনা করে সাধ্যমত তাদের আশ্রয়, থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কুতুপালংয়ে দুই হাজার একর জমি চিহ্নিত করা হলেও সেখানে সবার সঙ্কুলান হবে না বলে মনে করছেন ত্রাণমন্ত্রী।

“যখন দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল তখন ওই জায়গা ঠিক করা হয়েছিল। এখন লোক বেড়েছে, ওই ছোট জায়গায় তাদের রাখা সমীচীন মনে করি না। সেখানে পাঁচ হাজার একর জায়গা আছে, প্রয়োজনে আরও জায়গা আমরা বরাদ্দ দিতে পারব।”

ত্রাণ সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য অবকাঠামোগত সহযোগিতার পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রীরা আশ্বাস দিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে রাখতে হলে তাদের ভাসান চরে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে মায়া বলেন, “কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দারবানের পরিবেশ আমাদের রক্ষা করতে হবে।”

নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের রাখতে নৌবাহিনী কাজ শুরু করেছে জানিয়ে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, সেখানে ১০ থেকে ১২ হাজার একর জমি আছে।

ওই চর রোহিঙ্গাদের রাখার জন্য প্রস্তুত করতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে ত্রাণসচিব শাহ কামাল জানান।