সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া সংসদ সদস্যদের নিজ দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার বিধান করার সুপারিশ করেছে টিআইবি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2017, 01:56 PM
Updated : 17 Sept 2017, 03:13 PM

‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৬: দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যের ওপর বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে সরকারের কাছে এ সুপারিশ করা হয়।

রোববার এ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল ও নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন।

উপস্থাপক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে আইনি, প্রায়োগিক ও প্রাতিষ্ঠানিক এই তিনটি পর্যায়ে সংস্কারের জন্য ২১ সুপারিশ পেশ করেন।

আইনি সংস্কারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৭০  অনুচ্ছেদ সংশোধন করে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া সংসদ সদস্যদের নিজ দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার অনুমতি দিতে হবে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রূপে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন কিংবা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তার আসন শূন্য হয়ে যাবে।

এই বিধানকে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অন্তরায় হিসেবে দেখছেন অনেকেই।

সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট যোগ্যতার মাপকাঠি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের সুপারিশও করেছে টিআইবি।

সংস্থাটি অধস্তন আদালতের উপর আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণমূলক ধারা বাতিল, সরকারি কর্মচারীদের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পাবলিক সার্ভিস আইন প্রণয়ন এবং পুলিশকে জনবান্ধব করতে পুলিশ আইন ১৮৬১ সংস্কার, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৫ এর ৫৪ ধারা বাতিলসহ মোট ১১টি সুপারিশ করেছে।

এছাড়া ঘুষ ও দুর্নীতির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে দেশব্যাপী জরিপ পরিচালনা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ঘুষ-দুর্নীতি কতটুকু কমানো যাবে বা সন্তুষ্ট জনগণের হার কতুটুক বাড়ানো যাবে, তার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার সুপারিশ করেছে টিআইবি।

এছাড়াও বিচারবহির্ভূত হত্যা,গুম, ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত গঠন করা এবং স্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে শতভাগ ই-টেন্ডারিং করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক সংস্থাগুলোর জনবল বাড়ানোর সুপারিশও করেছে টিআইবি।

সংস্থাটি জনগণের মৌলিক স্বাধীনতা লংঘনের বিভিন্ন ঘটনা সরকারের পক্ষ থেকে ‘অস্বীকার করার প্রবণতা’ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশন নিয়ে বলা হয়, এখনও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব নিতে কমিশনারদের তৎপরতায়ও ঘাটতি রয়েছে।

“জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকা এবং নির্বাচনী দায়িত্ব ও নীতিমালা ভঙ্গকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।”

টিআইবি চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেছেন, “টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে মূলত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। এক্ষেত্রে উন্নয়নে যারা ক্ষমতাসীন তারাই কেবল যোগ্য বলে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখনও রয়ে গেছে।”

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ঠ ১৬ লক্ষ্য বাস্তবায়ন এখনও যা আছে তা দিয়েই বাস্তবায়ন সম্ভব।

“আমাদের এখনও মূল সমস্যা বাস্তবায়ন। কিন্তু এখনও বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করা হচ্ছে। অর্থ পাচারে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না।”