রোববার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকদের সঙ্গে এক সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এ সভায় নজিবুর রহমান রাজস্ব আদায় বাড়াতে ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ নীতির কথা বলেন।
পাশাপাশি রাজস্ব আদায় ও তা সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার বিষয়ে এনবিআরের দায়িত্বের কথা কর্মকর্তাদের মনে করিয়ে দেন।
সিআইসির মহাপরিচালক বেলাল উদ্দিন, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান এবং ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আল-আমিন প্রামানিক উপস্থিত ছিলেন এ সভায়।
মইনুল খান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কর ফাঁকি রোধে সবাইকে আরও কঠোর হতে বলেছেন চেয়ারম্যান। গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে বলেছেন। যেখানে অস্বচ্ছতা আছে, সেখানে সংস্কার করতে বলেছেন। মোট কথা, কোনো ধরনের অনুকম্পা না দেখিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।”
আট দফা নির্দেশনা
>> অর্থপাচার রোধে সরকারের সকল পক্ষের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করে মাঠ পর্যায়ে নজরদারি বৃদ্ধি এবং অর্থপাচারকারীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
>> দেশের স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরগুলোকে ‘সূচারু ও তীক্ষ্ণ’ নজরদারির আওতায় আনা।
>> দেশের বন্দরগুলো যাতে কোনোভাবেই চোরাকারবারিদের বিচরণ ক্ষেত্র হতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।
>> ভ্যাট ফাঁকি রোধে পণ্যের প্রকৃত উৎপাদন এবং তা থেকে নির্দিষ্ট হারে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে ভ্যাট গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা।
>> আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বাবদ সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব আহরণের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
>> যারা আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকি দেন, তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ দ্রুত তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
>> করখেলাপি ‘অসৎ ব্যবসায়ীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সৎ ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
>> রাজস্ব ফাঁকি রোধে মাঠ পর্যায়ে যে কোনো অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ করবে। প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের যে পরিকল্পনা করেছে, তার মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এনবিআরকে সংগ্রহ করতে হবে।
ভ্যাট থেকে ৯১ হাজার কোটি টাকা আসবে ধরে অর্থমন্ত্রী এবার চার লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ১ জুলাই থেকে সব খাতে অভিন্ন ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা দুই বছর পিছিয়ে যাওয়ায় তার সেই পরিকল্পনা বড় ধাক্কা খায়।
এই পরিস্থিতিতে ঘাটতি মেটানোর একটি পরিকল্পনা তৈরি করে গত মাসের শেষে তা অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে জমা দেয় এনবিআর।
সেখানে বলা হয়, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে না পারায় এবার ২০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি তৈরি হবে। তার মধ্যে ‘রাজস্ব বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে’ সিগারেট ও বিড়ি খাত হতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক (ব্যাংক হিসাব ও বিমান টিকিট) হিসেবে ৫০০ কোটি টাকা এবং ফাস্টফুডের ওপর প্রযোজ্য ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থেকে ১০০ কোটি টাকাসহ পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ সম্ভব।
এছাড়া বকেয়া রাজস্ব আহরণ ও কর প্রতিপালন বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের সম্ভাবনা দেখছে এনবিআর। সেই সঙ্গে ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির কারণে’ নয় হাজার ৩৮০ কোটি অতিরিক্ত রাজস্ব পাওয়া যাবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই হিসাবে শেষ পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে পাঁচ হাজার ২০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণের জন্য এনবিআরের অধীনে বিভিন্ন ভ্যাট কমিশনারেটের মাধ্যমে বৃহৎ মামলাগুলোর নিষ্পত্তি এবং নিরঙ্কুশ বকেয়া আদায়ের লক্ষ্যে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে এনবিআরের পক্ষ থেকে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়।