বড় শহরে গৃহকর বাড়ানোর পক্ষে মুহিত

বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব আয়ে গতি আনতে গৃহকর বা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর পক্ষে মত জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2017, 02:39 PM
Updated : 10 August 2017, 02:39 PM

বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “দেশের রাজস্ব বাড়াতে হলে রাজধানীসহ বড় বড় শহরগুলো থেকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে।”

নিজেকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে মুহিত বলেন, “বনানীতে আমার ১৪ কাঠার ভিটার মধ্যে প্রায় ৫ হাজার ৮০০ বর্গফুটের একটি বাড়ি আছে। ওই বাড়ির জন্য আমার বাৎসরিক ট্যাক্স ধরা হয় মাত্র ১১ হাজার টাকা। এরমধ্যে আবার কর রেয়াত পেয়ে দিতে হয় মাত্র ৬ হাজার টাকার মতো।”

ঢাকায় গৃহকর বাড়াতে আট বছর আগে তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন বলে জানান তিনি।

“আমার পরামর্শে তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্নির্ধারণ করার উদ্যোগ নিলেও এরপর আর কেউ ওই কাজটি এগিয়ে নেননি। ঢাকা শহরে এখনও ১৯৬৬ সালের নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করে।”

দারিদ্র্য বিমোচনসহ সরকারের নানা কাজে গতি আনতে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উপর জোর দেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (ফাইল ছবি)

“বর্তমান সরকার দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ জন্য প্রতিটি বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ক্রমান্বয়ে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

“এখন দারিদ্র্যের সংজ্ঞাও পরিবর্তনের সময় এসেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এখনও ১৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে। অর্থাৎ তাদের আয় সীমার বেইসলাইন অনেক উপরে হওয়াতে তাদের এখনও দারিদ্র্য আছে বলে মনে করে। আমাদের দারিদ্র্য সীমার সংজ্ঞাও পরিবর্তন করতে হবে।”

‘ইম্প্রুভিং ফিসকল ট্রান্সপারেন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মুহিত। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) এর আয়োজন করে।

পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মূল প্রবন্ধে বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই সরকারের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

“কিন্তু আমাদের দেশে সরকারের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা একটি দুর্বল দিক। ইন্টারন্যাশনাল বাজেট পার্টনারশিপ (আইবিপি) এর তৈরি ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে সি৩ ক্যাটগরিতে। অর্থাৎ স্বচ্ছতার নিচু সারিতে বাংলাদেশের অবস্থান।”

তিনি বলেন, আয়-ব্যয় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করতে হবে যাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।

অর্থমন্ত্রী সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, “এখন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনসহ সরকারের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয় অডিট হয়ে সংসদকে অভিহিত করতে হয়।”

বাজেটসহ সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়নের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) একটি স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার কথাও বলেন অর্থমন্ত্রী।

“সঠিক তথ্য পাওয়ার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটিকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া খুবই দরকার বলে আমি মানি। প্রতিষ্ঠানটিকে স্বায়ত্তশাসিত করতে আমি সংশ্লিষ্টদের বোঝাব।”

বিবিএস এক সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও এখন তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে।

“পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে,” বলেন মুহিত।