অর্থবছরের শুরুতে রপ্তানি আয়েও সুখবর

রেমিটেন্সের মতো রপ্তানি আয়েও সুখবর দিয়ে শুরু হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছর।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2017, 03:03 PM
Updated : 9 August 2017, 03:12 PM

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩২০ কোটি ৭০ লাখ (৩ দশমিক ২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এই অংক আগের অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ এবং রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা।

‘শুরুটা ভালোই হয়েছে’ মন্তব্য করে পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সার্বিক রপ্তানিতে ২৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অবাক করার মতো প্রবৃদ্ধি। পোশাক রপ্তানিতে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো।”

তবে বর্তমান বিশ্ববাজারে যেভাবে পোশাকের দাম কমছে তাতে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এক মাসের তথ্য দিয়ে বোঝা যাবে না। তিন মাসের তথ্য পাওয়া গেলে বোঝা যাবে পরিস্থিতি কেমন হবে।”

একই কথা বলেছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত। তিনি বলেন, “গত অর্থবছরে শুরুটা ভালো হয়নি, এবার বেশ ভালো। কয়েক মাস যাক, তারপর বোঝা যাবে।”

২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির আশা প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির বহুমুখী প্রতিকূলতার কারণে প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

“তবে আমাদের প্রধান দুটি রপ্তানি বাজারের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঞ্চলে রপ্তানি ইতোমধ্যেই অনেকখানি বেড়েছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হওয়ায় এ বাজারেও আমাদের রপ্তানির পরিমাণ অনেকখানি বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

বুধবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩২০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

এই হিসাবে জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় ১ শতাংশ কম এসেছে। এই মাসে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩২৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই মাসে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৭৭ দশমিক ৩০ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। এর মধ্যে নিট রপ্তানি থেকে এসেছে ১২৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। উভেন পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ১২১ কোটি ৫৯ লাখ ডলার।

নিট খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। উভেনে ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নিট পোশাক রপ্তানি কম হয়েছে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। উভেনে কম ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।

অন্যান্য খাতের মধ্যে জুলাই মাসে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে ৫৯ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।

তবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ কমেছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৫০ কোটি (৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ (৩৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।