জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয়ের পরিচালক সেলিম বলেন, উন্নয়নের নীতি নির্ধারক হবে একটি দেশের জনগণ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা কেবল উন্নয়নের সহযোগী ও সহায়তাকারী হতে পারে।
শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক উন্মুক্ত বক্তৃতায় তিনি বলেন, “উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্তদের মধ্যে মতানৈক্য থাকতে পারে, তিক্ততা নয়। সেটা সরকার, জাতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন সংস্থা হোক কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। আন্তর্জাতিক সংস্থাকে মনে রাখতে হবে, তারা যেন একটি দেশে এসে উন্নয়নের নীতি নির্ধারক না হয়ে যায়।”
সেলিম জাহান বলেন, বাইরে থেকে আগতরা দেশের উন্নয়নে নানাভাবে সহায়তা-সহযোগিতা দিতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ‘উন্নয়ন ভাবনা’ নামক সংস্থার আয়োজনে ‘উন্নয়ন তত্ত্বের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক বক্তৃতার পর এক প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সেলিম জাহানের এই মন্তব্য আসে।
তিনি বলেন, “উন্নয়ন হচ্ছে এমন একটি বিষয় যেটাকে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের উপর ছেড়ে দেওয়া যায় না- সরকারি হোক, বেসরকারি হোক বা আন্তর্জাতিক সংস্থাই হোক। সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।”
ঘণ্টার বেশি সময়ের ওই বক্তৃতায় প্রচলিত উন্নয়ন তত্ত্বের নানা দিক বিশ্লেষণ করে ‘প্রত্যেকের জন্য উন্নয়নের’ ধারণা নিয়ে মানব উন্নয়ন তত্ত্ব আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন তিনি।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং মানব উন্নয়ন ধারণা নিয়ে আরেক প্রশ্নের উত্তরে এসডিজিতে কিছু লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ‘দার্শনিক ভিত্তি সেভাবে নেই’ বলে মন্তব্য করেন সেলিম জাহান।
“বজায়ক্ষম উন্নয়নের জন্য কোন বিশ্লেষণাত্মক কাঠামোটি আমাকে গ্রহণ করতে হবে, সেটার কিন্তু আলোচনা সেভাবে আসেনি। সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আলোচনা না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত কেবল পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগোতে পারব না।”
এসডিজিতে ‘কাউকে পেছনে ফেলে যাব না’ এমন বক্তব্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ‘দুর্বলতার’ জায়গা তুলে ধরেন সেলিম জাহান।
“এই সব লক্ষ্যে আমরা সব সময় বলি যে, কাউকে পেছনে ফেলে রাখব না। এটা অনেক সময় একটি রাজনৈতিক স্লোগান। এটা অনেক সময় বলতে পারি, আমরা এটা বলার জন্য বলছি। অথবা এটাকে ধরে আমরা কাঠামো ঠিক করতে পারি।”
“লক্ষ্যমাত্রার কথা বলছি, লক্ষ্যমাত্রায় কীভাবে পৌঁছাবে সে কথা বলছি, কিন্তু কোন দর্শনের ভিত্তিতে পাঁচটি মাত্রিকতা সম্পৃক্ত করা হবে সেটা ঠিক করতে হবে আগে।”
এর আগে বক্তৃতায় সেলিম জাহান বলেন, “উন্নয়ন তত্ত্বের পেছনে দর্শনটা কী সেটা নির্ধারণ করতে হবে আগে। দার্শনিক কাঠামোয় থাকতে হবে সমাজের জন্য, ব্যক্তির জন্য, রাষ্ট্রের জন্য কী করতে হবে। তত্ত্ব যদি না থাকে তাহলে উপাত্তের বিশ্লেষণ ও নীতিমালা ঠিকমতো করা যাবে না।
“তত্ত্বের বাইরে গিয়ে কেবল সূচকের সন্নিবেশ ঘটালে সেটা তেমন অর্থবহ হবে না।”
উন্নয়নের কেন্দ্রে সবার আগে মানুষকে নিয়ে আসতে হবে মন্তব্য করে সেলিম জাহান বলেন, “উন্নয়নের বণ্টনে মানুষের চয়নের সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেজন্য তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, জ্ঞানের সীমা বৃদ্ধি করতে হবে এবং স্বাস্থ্য ঠিক রেখে দীর্ঘজীবন দিতে হবে।”
মানবাধিকার, নারী-পুরুষের সমতা এবং আন্তঃপ্রজন্মের মধ্যে সমতার উপর ভিত্তি করে মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন তৈরি হয় বলে জানান সেলিম জাহান, যিনি ১৯৯২ সাল থেকে ইউএনডিপির ওই রকম ২৫টি প্রতিবেদনের তৈরির সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশের সঞ্চালনায় উন্মুক্ত বক্তৃতায় আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ড. তৌহিদ রেজা নূর স্বাগত বক্তব্য দেন।