ঘাটতির ১৫ হাজার কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা এনবিআরের

নতুন অর্থবছরে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে না পারায় এবার ২০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির যে হিসাব এসেছে, তার মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা কীভাবে আহরণ করা যায়, সেই পরিকল্পনা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2017, 01:53 PM
Updated : 13 August 2017, 01:34 PM

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এনবিআর জানিয়েছে, তাদের ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেও পাঁচ হাজার কোটি টাকার মত ঘাটতি থেকে যাবে।

ভ্যাট থেকে ৯১ হাজার কোটি টাকা আসবে ধরে চার লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট এবার সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেখানে ১ জুলাই থেকে সব খাতে অভিন্ন ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের কথা বলা ছিল।

কিন্তু ব্যাপক বিরোধিতার মুখে সরকার ভ্যাট আইন কার্যকর করার বিষয়টি দুই বছর পিছিয়ে দিতে বাধ্য হওয়ায় অর্থমন্ত্রীর ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় পরিকল্পনা বড় ধাক্কা খায়।

বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে ‘যেভাবেই হোক ব্যবস্থা করতে হবে’।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এনবিআরের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ঘাটতি মেটাতে ‘রাজস্ব বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে’ সিগারেট ও বিড়ি খাত হতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক (ব্যাংক হিসাব ও বিমান টিকিট) হিসেবে ৫০০ কোটি টাকা এবং ফাস্টফুডের ওপর প্রযোজ্য ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থেকে ১০০ কোটি টাকাসহ পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ সম্ভব।

বকেয়া রাজস্ব আহরণ ও কর প্রতিপালন বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের সম্ভাবনা দেখছে এনবিআর।

সেই সঙ্গে ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির কারণে’ নয় হাজার ৩৮০ কোটি অতিরিক্ত রাজস্ব পাওয়া যাবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

“এই হিসাবে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে পাঁচ হাজার ২০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণের জন্য এনবিআরের অধীনে বিভিন্ন ভ্যাট কমিশনারেটের মাধ্যমে বৃহৎ মামলাগুলোর নিষ্পত্তি এবং নিরঙ্কুশ বকেয়া আদায়ের লক্ষ্যে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

এর সঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে পাওনা দুই হাজার কোটি টাকা এবং পেট্রোবাংলার কাছে পাওনা প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা আদায়ের জন্য অর্থ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এনবিআর।

বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য শওকত চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এনবিআর তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। কমিটি বলেছে, পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে হবে। সেই সঙ্গে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি এবং বকেয়া আদায়ের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।”

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের অনিয়মের দায়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে যে কোনো ঋণ মঞ্জুরির ক্ষেত্রে প্রস্তাব পর্যালোচনা, পর্যাপ্ত জামানত সংরক্ষণ ও ঋণ বিতরণ পরবর্তী মনিটরিংয়ের বিষয়ে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ব্যাংকটিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে বিদেশে স্থানান্তরিত অর্থ উদ্ধারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

এছাড়া সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ গচ্ছিত থাকার বিষয়ে পত্রিকায় ‘যে ভুল ব্যাখ্যা’ এসেছে, তা নিরসন করে প্রকৃত তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মো. আব্দুল ওয়াদুদ, নাজমুল হাসান, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, শওকত চৌধুরী এবং আখতার জাহান এ বৈঠকে অংশ নেন।