১০ বছরে ঢাকার সড়কে গতি কমেছে ৩ গুণ: বিশ্ব ব্যাংক

যানজটের কারণে ঢাকার সড়কের গতি শ্লথ হয়ে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বলে বিশ্ব ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2017, 03:37 PM
Updated : 19 July 2017, 05:27 PM

বুধবার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে বিশ্ব সংস্থাটির আয়োজনে দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “গত ১০ বছরে ঢাকায় যান চলাচলের গড় গতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে এসেছে।”

যানজটের কারণে বাংলাদেশের রাজধানীতে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বলে বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব।

পরিবেশ আন্দোলন বাংলাদেশের ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখানো হয়, যানজটের কারণে দিনে ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।

যানজটে ঢাকার এমন থমকে যায় প্রায়ই (ফাইল ছবি)

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২০১৩ সালে তার এক গবেষণায় দেখানো হয়, শুধু যানজটে কর্মঘণ্টা নষ্টের জন্য বছরে ক্ষতি হয় ১২ হাজার কোটি টাকা।

‘টোয়ার্ডস গ্রেট ঢাকা’ এই অনুষ্ঠানে ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে সৃষ্ট সমস্যা ও বিশৃঙ্খলার বিষয়টি উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ঢাকায় সড়ক বেড়েছিল ৫ শতাংশ; বিপরীতে সড়কে যান চলাচল বেড়েছিল ১৩৪ শতাংশ। মানুষ বেড়েছিল ৫০ শতাংশ।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ঢাকার নগরায়ন কেন্দ্র থেকে উত্তর দিকে এবং এখন পশ্চিম দিকে সম্প্রসারিত হচ্ছে। নগরীর পূর্ব দিকের এলাকাগুলো এখনও গ্রামীণ। 

“মহানগরীর এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশের সমান পূর্ব ঢাকা, গুলশানের মতো সমৃদ্ধ এলাকার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে। সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে পূর্ব ঢাকার দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ন যানজট ও পরিবেশের আরও অবনতি ঘটাবে।”

বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশের ঢাকায় বসবাসের তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান বলেন, বর্তমান হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে তিন কোটি। মহানগরীর পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ঢাকার জন্য অবশ্যই সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।

অনুষ্ঠানে ভারতের নয়াদিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত বলেন, ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত তার শহরও অগোছালো ছিল। তখন দিল্লিতে মাত্র একটি উড়াল সেতু ছিল। প্রধান সমস্যা ছিল যানজট।

অনুষ্ঠানে শীলা দীক্ষিত

“কিন্তু এরপর পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের মাধ্যমে এখন দিল্লিতে ২৫০ কিলোমিটারের বেশি মেট্রোরেল নির্মাণ করা হয়েছে। ৭৮টি উড়ালসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যে রাস্তায় ক্রসিং ছিল সেখানে ওভারপাস বা আন্ডার পাসের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।”

পরিকল্পিত উন্নয়নের কারণেই দিল্লিতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, বলেন শীলা।

অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, “আমরা ঢাকা শহরের পরিবর্তনের জন্য প্রথমে রাস্তা ঠিক করার কাজে হাত দিয়েছি। এখন যেভাবে কাজ চলছে তাতে আগামী দুই বছর পর আপনারা নতুন ঢাকা দেখবেন। তখন ঢাকার সকল রাস্তাই গুলশানের রাস্তার মতো হয়ে যাবে।”

এই সময়ের মধ্যে ঢাকা নগরীর বিভিন্ন জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে সফল হওয়ার আশা দেখান তিনি।

ঢাকা শহর এখন ‘কোরামিন’ দিয়ে চলছে মন্তব্য করে মেয়র আনিসুল বলেন, “এখন ঢাকা শহরকে কেন্দ্র করে যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, তার ফলাফল পেতে আগামী ২০৩৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সমন্বয়হীনতার কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মেয়র আনিসুল হক

অনুষ্ঠানে মেয়র সাঈদ খোকন

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গোছালো না হওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন। তা এড়াতে তিনি ‘সিটি গভর্ন্যান্স’ গঠনের উপর জোর দেন।

এ মুহূর্তে ঢাকা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিয়েও সমস্যায় রয়েছে বলে জানান উত্তরের মেয়র আনিসুল।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “পানির সমস্যা দূর করার জন্য আমরা সমন্বিতভাবে তিনটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর জন্য পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে পানি সরবরাহ করা হবে। তখন ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ ভাগে।”

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন

জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করার জন্য আলোচনা শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন রামা বলেন, ঢাকা শহরকে সুশৃঙ্খল করতে সমন্বিত পরিকল্পনার উপর জোর দেন। 

তিনি বলেন, “পূর্ব সাংহাইয়ের পুদং এলাকাসহ অনেক উদাহরণ প্রমাণ করে, যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি, বাসযোগ্যতার উন্নতি এবং যানজট নিরসন করতে পারে।”

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, “আমরা দিল্লি ও সাংহাইর উন্নতির শতভাগ না হলেও এর কিছু অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল অফিসের সমন্বয়কে আমি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি।”

২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে ঢাকাকে উন্নীত করতে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা অর্জনে অবশ্যই ঢাকার শহরায়ন সম্প্রসারণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার উপর জোর দেন মার্টিন রামা।

“একাজ করার সঠিক সময় এখনই,” বলেন বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ।