এবার আগেই বাজেট সংশোধন

ভ্যাট থেকে পিছু হটার কারণে রাজস্বে টান পড়বে বলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ‘বেশ আগেই’ সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2017, 04:07 AM
Updated : 26 July 2017, 09:00 AM

দল চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেওয়ার আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন টানা নয় বার এবং মোট ১১টি বাজেট দেওয়া ৮৪ বছর বয়সী মুহিত।

শনিবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে বাজেট এবং ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

মুহিত বলেন, “এবার আমি সংশোধিত বাজেট বেশ আগেই দেব, দিতে হবে। কেননা, যেহেতু নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে কারণে বাজেটের অনেক ফিগার চেঞ্জ (পরিবর্তন) করতে হবে।”

ভ্যাট থেকে ৯১ হাজার কোটি টাকা আসবে ধরে ৪ লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট সংসদে প্রস্তাব করেছিলেন মুহিত। কিন্তু ব্যাপক বিরোধিতার মুখে ভ্যাট আইন কার্যকর করা দুই বছর পিছিয়ে দিতে হয়েছে তাকে। ফলে ভ্যাট থেকে রাজস্ব ২০ হাজার কোটি কম আসবে বলে তার অনুমান।

“সে কারণেই বলছি এবার বাজেটের বড় সংশোধন করতে হবে এবং সেটা আমি বেশ আগেই করব। জাতীয় সংসদেই এই সংশোধন আনা হবে,” বলেন মুহিত।

প্রথা অনুযায়ী, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে নতুন বাজেট পেশের সময় বিদায়ী বাজেটের সংশোধন উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এবার তাতে ব্যতিক্রম ঘটছে।

আইএমএফের পরামর্শে ভ্যাট আইন করেছে সরকার। সেটা বাস্তবায়নে বার বার পিছু হটায় সংস্থাটির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, তিনি তা মনে করেন না।

“আমরা ২০১৬ সালে ভ্যাট বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলাম; পারিনি। ২০১৭ সালেও পারলাম না। কিন্তু সে কারণে আইএমএফের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কোনো প্রভাব ফেলবে না। আমরা আমাদের নিজস্ব বাস্তবতায় ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হবে কেন?”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবার রাজস্ব ঘাটতি পূরণে সরকারের সামনে করজাল সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। আর সেই চাপ সামাল দিতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বলেন, ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি ‘যেভাবেই হোক ব্যবস্থা করতে হবে’।
কীভাবে সেই ব্যবস্থা হবে- সে বিষয়ে মুহিত বলেন, বাজেটে আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা।

“এখন রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস হবে এই আয়কর ও করপোরেট কর।”

তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর বিদ্যমান শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ হারেই বহাল থাকছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমেরিকা এবং ইউরোপের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের দাম কমে গেছে। রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে উৎসে কর আগেরটিই রাখা হচ্ছে।”

ইতোমধ্যে এনবিআর এ বিষয়ে এসআরও জারি করেছে বলে জানান মুহিত।

২৮ জুন বাজেটের উপর সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন।

বাজেট পাসের পর বিজিএমইএর নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের দেন দরবারে তৈরি পোশাকের উৎসে কর কমানো হল।

বাজেট আলোচনায় সংসদ সদস্যরা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার না কমানোর কথা বলেছেন।

এ অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে কি না-এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ক কমিটির বৈঠক হবে। সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

“তবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না যাতে পেনশনারভোগী এবং মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সঞ্চয়পত্রের সুবিধা যাদের পাওয়ার কথা তারা যাতে পায় সেই ব্যবস্থায় নিশ্চিত করা হবে।”

দল চাইলে আবার নির্বাচন

আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “আমার বয়স হয়েছে; আর নির্বাচন করার ইচ্ছে নেই। তবে যদি আমার পার্টি প্রয়োজন মনে করে, তাহলে বিবেচনা করব। তখন নির্বাচন করতে পারি।”

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর অর্থমন্ত্রী বার বারই বলে আসছেন, তিনি আর মন্ত্রী হবেন না। সিলেটে তার নির্বাচনী আসনে ভাই এ কে এ মোমেনের তৎপরতাও দেখা গেছে।

এই বাজেট দেওয়ার আগেও মুহিত বলেছিলেন, দ্বাদশ বাজেট দিয়েই ছুটিতে যাচ্ছেন তিনি।

শেখ হাসিনার সরকারে দুই মেয়াদে এই পর্যন্ত ১০ বার বাজেট দেওয়ার আগে ১৯৮২-৮৩ সালে এইচ এম এরশাদের সামরিক সরকারের সময়ে প্রায় ২০ মাস অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সাবেক আমলা মুহিত।

ছুটি নেওয়ার পর লেখালেখিতে ব্যস্ত হওয়ার কথাও বলেছিলেন মুহিত; মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন ও রাজনীতি নিয়ে যার ২৩টি বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।