এডিপি বাস্তবায়ন আট বছরে সর্বনিম্ন

বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদ মিলিয়ে গত আট বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন সবচেয়ে কম হয়েছে সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2017, 04:16 PM
Updated : 8 July 2017, 04:16 PM

গত অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে মোট বরাদ্দের মধ্যে থেকে এক লাখ ছয় হাজার ৫৮১ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৮৯ দশমিক ৩৪ ভাগ।

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) করা গত অর্থবছরের বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দের ৮৪ ভাগ বাস্তবায়িত হয়েছিল। এরপর আর কোনো অর্থবছরেই বাস্তবায়ন ৯০ শতাংশের নীচে নামেনি।

গত অর্থবছরের জন্য এক লাখ ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার এডিপি গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য ৩৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ৫ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছে সরকার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। 

গত অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার কারণে দাতাসংস্থা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাসহ (জাইকা) বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত অনেক বিদেশি কর্মকর্তা চলে যাওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

 

এরপর পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলন করে গুলশানের জঙ্গি হামলার কারণে এডিপি বাস্তবায়ন শতভাগ অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছিলেন। তবে ওই সময় মন্ত্রীর আশা ছিল, শতভাগ না হলেও অন্যান্য অর্থবছরের তুলনায় বেশি হতে পারে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছর এডিপিতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এসেছে ৭২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৯৩ শতাংশ।

এছাড়া প্রকল্প সহায়তার তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা বা ৭৮ ভাগ এবং বিভিন্ন সংস্থা তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ছয় হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

গত অর্থবছর সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা ব্যয় বা বরাদ্দের ৯৬ ভাগ বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিদ্যুৎবিভাগ ১৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা তাদের বরাদ্দের ১০১ শতাংশ।

এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৯ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা (৯৯.৭৬ শতাংশ), রেলপথ মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ৬৭ কোটি টাকা (৬৫ শতাংশ), সেতু বিভাগ ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা (৫৬ শতাংশ), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা (৮৮.৮৪ শতাংশ), গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বরাদ্দের শতভাগ ৬ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৪ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা (৯০ শতাংশ), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা (৮০ শতাংশ) এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা (৯৬ শতাংশ) ব্যয় করেছে।

এছাড়াও পানি সম্পদ মন্ত্রণাল বরাদ্দের ৯০ শতাংশ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৯৪ শতাংশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ১১৯ শতাংশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৯৬ শতাংশ এবং নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় ১০৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।

এসব বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে মোট বরাদ্দের ৮৪ দশমিক ৪০ ভাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, গেল অর্থবছরে সবচেয়ে কম বাস্তবায়ন হয়েছে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ। প্রকল্প সহায়তায় ৩৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে ২৭ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা বা বরাদ্দের ৭৮ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার প্রতিবছর যেভাবে ৩৫ শতাংশ হারে এডিপির আকার বাড়াচ্ছে বাস্তবায়ন সক্ষমতা কিন্তু সেভাবে বাড়ানো হচ্ছে না।

“তাছাড়া এডিপিতে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে সময় মতো প্রকল্প শুরু করতে না পারা। জমি অধিগ্রহণ ও ক্রয় কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রতা এ সমস্যার প্রধান কারণ।”

তিনি বলেন, “গেল অর্থবছরেও বিশ্বব্যাংক ১৮০ কোটি ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর করেছে। এগুলো সব নতুন প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করতে দেরি হলে অবশ্যই বছর শেষে সার্বিক বাস্তবায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

তিনি সরকারের, বিশেষ করে বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে মাত্র ছয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

এর মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বরাদ্দের ১১৯ শতাংশ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ১০৬ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ১০২ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১০০ শতাংশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১০০ শতাংশ এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৯৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে।

অপরদিকে সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন করেছে আইন ও সংসদ বিভাগ- বরাদ্দের মাত্র ৩৯ শতাংশ। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৫৩ শতাংশ, সেতু বিভাগ ৫৬ শতাংশ, শ্রম ও কর্মসংস্থান ৬৩ শতাংশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ৬৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।