অর্থবছরের শুরুতেই এডিপি বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

শেষদিকে তাড়াহুড়ো না করে অর্থবছরের শুরু থেকেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2017, 11:19 AM
Updated : 2 July 2017, 11:19 AM

রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে সচিব কমিটির সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অর্থবছরের শেষদিকে তাড়াহুড়ো না করে বছরের শুরু থেকেই বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করুন। বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের পেপার ওয়ার্ক সম্পন্ন করুন। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের প্রয়োজন হলে তা দ্রুত করে ফেলুন। পাশাপাশি কাজের গুণগতমানের সঙ্গে কোনো আপস করা যাবে না।”

গত ১ জুন চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা; যার এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা যাবে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে।

কিন্তু কোনো বছরই শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হয় না এবং অর্থবছরের শেষ দিকে তড়িঘড়ি অর্থ খরচ করা হয়। বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৬৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা গেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার আরও বাড়াতে সরকারি কর্মকর্তাদের তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে গ্রাম উন্নয়ন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমানো, দুর্নীতি রোধ, সুশাসন নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে তা বাস্তবায়নে শীর্ষ আমলাদের নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, “গ্রাম উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে, কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। যাতে গ্রামের মানুষ কাজের খোঁজে শহরে না আসে। শহরের উপর জনসংখ্যার চাপ যাতে না বাড়ে সে ব্যবস্থা করতে হবে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর বলেন, “ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্য কমাতে হবে। সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়।”

একইসঙ্গে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

দক্ষ এবং যোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ভালো কাজের জন্য পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য তিরস্কারের ব্যবস্থা করতেও নির্দেশ দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “সুশাসন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিন। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে সেবা পেতে জনগণকে যাতে ভোগান্তির শিকার না হতে হয় তার উদ্যোগ নিন।”

সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা যে হারে বেতন ভাতা বাড়িয়েছি পৃথিবীর কোনো দেশ তা করতে পারেনি। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এটা কোনোভাবেই যেন না হয়।”

প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ দমন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এবং এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।

এছাড়া আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করে ন্যায়সঙ্গত পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করা এবং তরুণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার দিতেও পরামর্শ দেন।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সচিব কমিটির সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উদ্দেশ্যে বলেন, “একটি রাজনৈতিক সরকার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্ষমতায় আসে। কিন্তু সচিবদের অনেক সময় ধরে সেবা দেওয়ার সুযোগ থাকে।”

সচিবদের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তার দলের রাজনৈতিক দর্শন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি একটি ভালো দল পেয়েছেন।

শেখ হাসিনা তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন এবং সচিবদের শুধু সরকারি কর্মকর্তা নয়, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।