বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া বলেন, “ব্যাংক আমানতে বাড়তি আবগারি শুল্ক থেকে সরকার কত পাবে? আয় আসবে ২০০ কোটি টাকার মত। এরজন্য বিপুল লোকের আয় কমিয়ে দেব?”
“রবীন্দ্রনাথের সেই দাদুর কথা মনে পড়ছে। যে নিজের নাতিকে খুন করে যক্ষ বানিয়ে ধন পাহারা দিয়েছিল। অর্থমন্ত্রী কি আমাদের যক্ষের ধন পাহারাদার বানাচ্ছেন? ব্যাংকের সুদ নিম্ন পর্যায়ে, ব্যাংক সার্ভিস চার্জ কাটে। এর মধ্যে এই আবগারি শুল্ক হবে মরার উপর খাঁড়ার ঘা। এটাতো মহারানি ভিক্টোরিয়ার আমলের টাকা না, যে ঘি দিয়ে প্রদীপ জ্বালাব।”
তিনি বলেন, “পুরো প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিলে ক্ষতি হবে ৩৫৫ কোটি টাকা। এটা অর্থমন্ত্রীর জন্য, আমাদের বাজেটের জন্য পিনাট। সেখানে কেন উনি (অর্থমন্ত্রী) হাত দিচ্ছেন?”
প্রস্তাবে বলা হয়, বছরের যে কোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে।
পাশাপাশি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা আবগারি শুল্ক বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করেছেন না। তারা বলছেন, শুল্ক বাড়লে লেনদেনের অবৈধ মাধ্যম উৎসাহিত হবে।
ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় কয়েকজন সাংসদও জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
এরপর অর্থ প্রতিমন্ত্রী মান্নান মঙ্গলবার সংসদে এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহলে ‘চিন্তা-ভাবনা’ চলার কথা জানান।
বুধবার অর্থমন্ত্রী এই শুল্কের হারে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বাজেট আলোচনায় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর বিরোধিতা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদ কমানো ঠিক হবে না। ১০ শতাংশ সুদ ধরলে হয়ত হবে এক হাজার কোটি টাকা। এর সুবিধা পাবে লক্ষ লক্ষ লোক। যাদের জন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প নাই। তারা ট্রাকের সামনে দাঁড়াতে পারেন না, হাত পাততে পারেন না। এদের অনেকে সিনিয়র সিটিজেন। নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
“আমরা অনেক শ্রেণির মানুষকে ভর্তুকি দেই, যার প্রাপ্য নয়। তারচেয়ে বড় কথা, ঋণ খেলাপিদের বিশাল বোঝা নিতে পারলে আমরা কেন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের সামান্য বোঝা নেব না। প্রব্লেম একটাই, এদের প্রেসার গ্রুপ নাই, থাকলে লেজ গুটায়ে মেনে নেওয়া হত।”
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের কাছ থেকে বা বিদেশি ঋণের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের ঋণ ভালো ও সহজ।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “মোটা চালের দাম বাড়লে কৃষক দাম পাবে। আমরা কৃষককে বাধ্য করতে পারি না। আবার চালের দাম রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়। তাই ঝুঁকি নিয়ে ব্যালেন্স করে আগাতে হচ্ছে।”
আইএমএফ, বিএনপি ও মোহাম্মদ ইউনূসেরও সমালোচনা করেন কৃষিমন্ত্রী।
আলোচনায় বিদ্যুৎ পরিস্থির সমালোচনা করে জাসদের নাজমুল হক প্রধান বলেন, “সকালে বিদ্যুৎ আসলে বিকালে নাই, বিকালে আসলে ইফতারের সময় নাই, ইফতারে আসলে সেহেরিতে নাই। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য নাই। জনগণ নানা কথা বলছে।”
বিড়ি ও সিগারেটে একই রকম করারোপের প্রস্তাব না করার সমালোচনা করে নাজমুল হক বলেন, “এতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো উপকৃত হবে। তারা একটি পয়সাও দেশে বিনিয়োগ করে না। অন্যদিকে দেশীয় বিড়ি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করে। সব তামাক পণ্যের উপর একই শুল্ক আরোপ করা হোক।”
তিনি বলেন, “আগে গ্রামে হুক্কা-নাশা ছিল। উন্নয়নের কারণে সেগুলো বিদায় নিয়েছে। বিড়ি বিদায় করবেন, উনি বলেননি তামাক বিদায় করবেন। সিগারেটকে কেন উৎসাহিত করছেন? সিগারেট গরীব লোক খায় না বলে?”