নিজের ‘বেস্ট’ বাজেট নিয়ে আসছেন মুহিত

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2017, 03:53 PM
Updated : 31 May 2017, 02:44 PM

অর্থমন্ত্রী হিসেবে এই পর্যন্ত ১০ বার জাতীয় বাজেট দিয়েছেন, একটানাই আটবার; তার মধ্যেই আগামী বাজেটকে এগিয়ে রাখছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলছেন, আগামী বৃহস্পতিবার সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট উপস্থাপিত হচ্ছে, সেটাই হতে যাচ্ছে, তার ‘সেরা’ বাজেট।

এই মেয়াদ পার করার পর আর মন্ত্রী হবেন না বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন ৮৩ বছর পেরিয়ে আসা মুহিত। তাতেও আরও একটি বাজেট তার দেওয়া বাকি থাকে।

কিন্তু ভোটের আগে আগামী বছরের সেই বাজেটে যে ‘চাপাচাপি’ কিছু করতে পারবেন না, তার স্বীকারোক্তিও এরই মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফলে নিজের মতো করে কিছু করার, তা এই বাজেটেই করতে হচ্ছে মুহিতকে।

তিনি বলছেন, শেখ হাসিনার দুই সরকারের মেয়াদের সব বাজেট সমন্বয় তৈরি হচ্ছে এই বাজেট। এই বাজেটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।

বাজেটকে কেবল সরকারের বছরের আয়-ব্যয়ের ফর্দ হিসেবে দেখেন না মুহিত; তার ভাষায়, বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নেওয়ার পথরেখা তৈরির চেষ্টা তার নিরন্তর।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

সেই কারণে বাজেটের আকার ক্রমেই বাড়িয়ে চলছেন মুহিত, তার স্বপ্ন শেষ বাজেটটি দিয়ে যাবেন ৫ লাখ কোটি টাকার; আর সেজন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে গিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়তে হচ্ছে তাকে।

এবারের বাজেটের আগেও ভ্যাট নিয়ে সেই জটিলতা পোহাতে হচ্ছে মুহিতকে। অন্য বিষয় ছাপিয়ে পণ্য বিক্রির উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাটই এবার হয়ে উঠেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

এই ভ্যাট নিয়ে নিজের ভাবনাসহ বাজেটে কোন চিন্তায় কোন কোন খাতে জন্য কী কী রাখছেন, তা নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদকদের সঙ্গে কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

বাংলাদেশকে ‘বিশ্বে উন্নয়নের নতুন মডেল’ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নে শেখ হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন- ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’।

মুহিতের পৌনে এক ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে নতুন বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও বিশ্ব অর্থনীতির হালচালও উঠে এসেছে।

এটা আপনার একাদশ বাজেট, টানা হিসেবে নবম। এবারের বাজেট নিয়ে কিছু বলুন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত: এবারকার বাজেটের প্রত্যেকটি মিটিং ওয়াজ পার্টিসিপেটোরি অ্যান্ড ওপেন। ইউ হ্যাভ লিসেন্ড টু রিঅ্যাকশন, সাজেশনস... সেগুলো বিভিন্ন মহল থেকে এসেছে। অ্যান্ড ইউ হ্যাভ অলসো লিসেন্ড টু মাই রিঅ্যাকশন ‍টু সাম... নট অল অব দেম। অনেকগুলোকে আমি রিঅ্যাকশন দিয়েছি। সুতরাং এখন আমার পক্ষে বলার অতি সামান্য বিষয়ই আছে।

নাম্বার ওয়ান- দি সাইজ অব দি বাজেট। আই কান্ট টেল ইউ, এটা এখনও গোছগাছ হচ্ছে। আমি যেটা বলেছিলাম যে বাজেট চার লাখ কোটি হওয়া উচিৎ, চার লাখ কোটির কম হওয়া উচিৎ না। ইট উইল বি ফোর লাখ কোর সামথিং।

বরাদ্দে এবার কোন কোন খাত অগ্রাধিকার পাবে?

মুহিত: মানব সম্পদের উন্নয়ন হল প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু মানবসম্পদ উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাবে না। বেশিরভাগটা পরিবহন এবং জ্বালানিতে চলে যাবে। তার কারণটা হচ্ছে- পরিবহন, জ্বালানি ভেরি লাম্পি ইনভেস্টমেন্ট। আর মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য উই হ্যাভ টু হ্যাভ ভেরিয়াস কাইন্ড অফ প্রজেক্টস। সুতরাং এগুলো সময়সাপেক্ষ, এখন খরচ বোধহয় এত বেশি হয় না।

এবার বোধহয় বাজেটে- উই উইল নোটিস- মানবসম্পদের উপর জোর দেওয়া হয়েছে এমন কিছু প্রত্যক্ষ নিদর্শন উদ্ভাসিত হবে। কারণ মানবসম্পদের জন্যে, বিশেষ করে আপার ম্যানেজমেন্ট লেভেলের স্ট্রেংথ বাড়ানোর জন্য এবং আমাদের টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউশনগুলোর ক্যাপাসিটি ইমপ্রুভমেন্টের জন্যে অনেক ধরনের প্রকল্প এবং চিন্তাধারা এগুলো নির্বাচন করা হয়েছে।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

যদিও আমাদের দেশ ওয়ান ইন্টিগ্রেটেড ইকোনমি, তবু কিছুটা ব্যাকওয়ার্ড এরিয়া আছে; এবারও এগুলোর স্বীকৃতি দিচ্ছি আমরা। এটাতে (বাজেটে) ব্যাকওয়ার্ড এরিয়াগুলো চিহ্নিত করা থাকবে এবং সেটার জন্য কিছু বরাদ্দ থাকবে। প্রতিবন্ধীদের বিষয়টা বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউ উইল ফাইন্ড ইট ইন দ্য বাজেট প্রপোজালস, ইন দ্য রেভিনিউ প্রপোজালস- সবখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অ্যাকচ্যুয়ালি আমরা নিজেরাই চাই এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। প্রতিবন্ধী আমাদের দেশে যথেষ্ট। আমাদের জরিপ-টরিপ এগুলো ঠিক না, প্রতিবন্ধীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের অসুস্থতা জটিল সেটা সকলেই জানেন।

অ্যাজ কালচার, হোয়াটেভার ইনক্লুডস.. যা দিয়েছি বাজেটে সেটা থাকবে।

কৃষিতে আমরাতো খুব কম খরচ করি। আমরা সরকার থেকে খুব বেশি কিছু করি না। কৃষকও বেশি কিছু চায় না। কৃষিতে আমরা অসাধারণ উন্নতি করেছি। এই ধারাটা আমরা রাখতে চাই। উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। আমরা এটার ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।

এবার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ভ্যাট নিয়ে কিছু বলুন।

মুহিত: এটা মোস্ট কমপ্লিকেটেড, ভ্যাট নিয়ে পরে বলব। বাজেট নিয়ে আরও কিছু বলি। আমাদের অন্যতম কৃতিত্ব হল বাজেট বৃদ্ধি। ৯৫ হাজার কোটি থেকে আমরা এবারে ৪ লাখ কোটি প্লাস করে ফেলব। আমার বিশ্বাস, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ কোটির মতো করব। আগামী বছরে উই মে টার্গেট ফাইভ লাকস ক্রোর।

সরকারের দক্ষতার অভাবে বাজেট বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে কি?

মুহিত: ট্রু, আমাদের দক্ষতার অভাব আছে। কিন্তু দক্ষতার যে উন্নয়ন হয়েছে, সেটার জন্য একটু কৃতিত্ব দেওয়া দরকার। ৯৫ হাজার কোটি টাকা বাস্তবায়নের জায়গায় এবারে ৩ লাখ ১৭ হাজার হাজার কোটি বাস্তবায়ন হচ্ছে- দ্যাট ওয়াজ এ রিমার্কেবল ইমপ্রুভমেন্ট।

এবার আমি ভ্যাট নিয়ে বলি, ভ্যাট আইনটা ২০১২ সালে আমরা পাস করেছি, কিন্তু এটার সম্পূর্ণ প্রয়োগ এখনও হয়নি, ভেরিয়াস পার্টস অব দিজ হ্যাভ বিন ইমপ্লিমেন্টেড। এখন এটা ফাইনালি ইমপ্লিমেন্টেশনে যাবে। এখানে আমরা একটি বেসিক ব্যাপার এবারে প্রথম থেকেই বলছি যে, রেট উইল বি ইউনিফর্ম এবং রেটটা ভ্যাটের সূচনালগ্ন থেকে ১৫ শতাংশ। সহজ করা হয়েছে অনেক সময়। ৩, ৪, ৭ শতাংশ এই রকম করে বাস্তবায়নের একটি প্রিন্সিপল হচ্ছে… কয়েক রকমের সহজ শর্ত থাকবে না, ওয়ান রেট উইল বি অ্যাপ্লাইড। হোয়াট ইট মিনস: যিনি সহজ শর্ত চান, তাকে জবাব দিতে হবে যে আমি এত টাকা দিয়ে দিয়েছি সুতরাং আমার উপর ১৫ শতাংশ হবে না, ১৫ শতাংশে যেটা দিতে হয় সেটা থেকে আমাকে এত টাকা মাইনাস দিতে হবে। তার জন্য হিসাব প্রস্তুত করা হইল অত্যন্ত জরুরি, যেটা করতে আমাদের ব্যবসায়ীরা তেমন রাজি নন।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

আমরা এটা হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করেছি, রেয়াতই দিচ্ছি, কিন্তু আগেই বলেছি, এটা বাড়াব। লিমিট অব টোটাল বিজনেস এখন আছে ৩০ লাখ এটাকে বাড়াচ্ছি। নট টু মাচ, সামান্য। আরেকটা যেটা ৮০ লাখ সেটাতে ৩ শতাংশ আছে, সেটাকে অনেক বাড়াচ্ছি। সেটাকে সাবসট্যানশিয়ালি হবে। এটা অবশ্যই ১ কোটির বেশি হবে।

ভ্যাটে দেয়ার ইজ লস অব রেভিনিউ। এই লসটাকে কাভার করতে হবে.. কাভার করার উপায় হলো, টু ইনক্রিজ ভ্যাট পেয়ারস ইন দিজ কান্ট্রি। আট লাখ ব্যবসায়ীর মধ্যে ব্যবসার মধ্যে মাত্র ৩২ হাজার ট্যাক্স পে করে। এখন যে রিলিফ-টিলিফ হবে তাতে এটা হয়তো আরও চার-পাঁচ হাজার কমে যাবে। সেখানে আমি টার্গেট রেখেছি, নেক্সট টু ইয়ার্সে নাম্বার শুড বি রেইজড টু ফিফটি থাউজেন্ড- পঞ্চাশ হাজারে আমরা নিয়ে যাব। পঞ্চাশ হাজারকেই ফিসক্যাল ডিভাইস, আগে যেটা ইসিআর (ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার) ছিল, সেটা ইনস্টল করতে হবে, আগামী দুই বছরের মধ্যে। দিজ ইজ দি মোস্ট অ্যাম্বিশাস পার্ট অব দি টার্গেট। বাট বেনিফিটও হবে যথেষ্ট।

ভ্যাটের হার হয়তো ১৫ শতাংশ থেকে কম হবে না…। কিন্তু ভ্যাট রিলিফের মাধ্যমে ১৫ শতাংশের বাইরে প্রচুর লোককে নিয়ে যাব। অর্থাৎ ৩ শতাংশওয়ালাদের সংখ্যা অনেক বাড়বে এবং তিন শতাংশের ওখানেও কিছু হেরফের করবে।

বাট আই হ্যাভ অবটেইন নেসেসারি অ্যাপ্রুভাল অ্যাট অল লেভেল, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা নিয়েছি।

ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমাবেন বলে আগে বলেছিলেন। এখন বলছেন, কমাবেন না। কেন?

মুহিত: এটা করব না। ইট উইল আপসেট দ্য হোল সিস্টেম। কমালেও সামান্য কমাতাম। হিসাবে একটু হেরফের হতো।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

আই অ্যাম ভেরি মাচ ইমপ্রেসড বাই আহসান মনসুর, সে একটি প্রবন্ধ বের করেছিল এবং জিনিসটা সে খুব সুন্দর করে বলেছে, ফ্রম দি বিগিনিং ভ্যাট হ্যাজ বিন ফিফটিন পার্সেন্ট, ডোন্ট চেইঞ্জ ইট। আমাকে তার আর্টিকেলটা আরও বৃহত্তর আকারে দিয়েছে। কারণ যেটা পাবলিশ করেছে সেটা একটু কাট-ছাঁট করে পাবলিশ করেছে।

আমি রিলিফ দিচ্ছি, সেটা এক্সেম্পশনে এবং লো রেটের ক্ষেত্রে। ওটা একটু বাড়াতে পারি, ৩ থেকে একটু বেশি, ব্যাপক কিছু হবে না- অতি সামান্য।

এটা কি আরও বেশি টাইট হয়ে গেল না?

মুহিত: মোটেই না। ইফ ইউ সি দ্য টোটাল পিকচার, ইউ উইল ফাইন্ড হাউ হেলপফুল ইট ইজ। হোয়েন ইউ গেট দ্য এক্সাক্ট ফিগার, হাউ মেনি পিপল এক্সেম্পটেড ফ্রম ফিফটিন পার্সেন্ট, ইউ উইল হ্যাভ দি...

নতুন ভ্যাট আইন জিনিসপত্রের দাম বাড়াবে না?

মুহিত: না, কখনোই না। বাড়ার কোনো চান্স নাই। ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম খামোখা বাড়ায় দিয়েছে, রোজাকে উপলক্ষ করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

এনবিআরের একটি প্রতিবেদন আছে, যেখানে কীভাবে প্রভাব পড়বে, কীভাবে দাম বাড়বে, তা বলা হয়েছে।

মুহিত: নাহ। এনবিআরের কোথাও বলা নাই যে, আমাদের জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। জিনিসপত্রের দাম যেগুলোতে বাড়ার কথা সেগুলি আমরা এক্সেম্পটরি করে দিয়েছি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাম কিছু কমতে পারে। ওই অব্যাহতির ফেরে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভ্যাটের জটিলতা কোনো প্রভাব ফেলবে কি?

মুহিত: প্রশ্নই আসে না। আমার কোনো বাজেটেই বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। কোনো প্রতিবাদ হয়নি, বিএনপির দিক থেকে ছাড়া। এবার প্রতিবাদ আরও কম হবে।

১৫ শতাংশ ভ্যাটে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন আছে কি?

মুহিত: প্রধানমন্ত্রীর অ্যাপ্রুভাল ছাড়া বাজেট হয় না।

আপনি বলছেন এবারের বাজেট হবে আপনার বেস্ট বাজেট। এমনটা বলেছেন কেন?

মুহিত: আমি এবার যে বাজেট দিতে যাচ্ছি সেটা হবে সবচেয়ে কার্যকরী বাজেট। এর পরের বাজেটটা (২০১৮-১৯) যেটা আমি দিব, সেটা নির্বাচনী বাজেট হবে। সেই বাজেটে নতুন উদ্যোগ তেমন কিছুই নেওয়া হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোই চলবে এবং যেসব ইস্যু অকস্মাৎ ডেভেলপড হয়েছে, সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেখানে করের হার বাড়ানো টাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা কম থাকবে।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

এজন্য আমি বলেছি, এটাই কার্যকরী বাজেট। নাউ আই অ্যাম মোর অর লেস শিওর, আমার নিজস্ব ফিলিংস হল, দিজ ইজ দ্য বেস্ট বাজেট টু আই হ্যাভ ইভার গিভেন। ইট ইজ গোয়িং টু বেস্ট বাজেট আই হ্যাভ এভার গিভেন। আজকে আমি কনভিন্সড, আফটার ফাইনাল ডিসকাশন উইথ অল। আই ফিল ভেরি হ্যাপি টুডে।

সে কারণেই আমি বলছি, এটা আমার শেষ কার্যকরী বাজেট, শেষ কার্যকরী বাজেটের মতোই সেটা হবে।

শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

মুহিত: শিক্ষা খাতে বাজেট তো আমরা গত বছর থেকেই বাড়াচ্ছি। লক্ষ্যমাত্রা যেগুলো করছি, সেগুলো ভেরি প্র্যাকটিক্যাল লক্ষ্য- এটা চলতেই থাকবে। শিক্ষাখাতে করাটাও যায়। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে কষ্ট আছে। কেননা স্বাস্থ্য খাতে এই যে, হাউ ডু ইউ মেইক ইট ইজি, হাউ ডু ইউ প্রোভাইড মেডিসিনস। অ্যাটেন্ডেড বার্থ রেট বেড়েছে, তার বড় কারণ ডেথ রেট কমানো হয়েছে।

প্রত্যেকবারই আপনার বাজেট আগেরটাকে ছাড়িয়ে যায়, মানে নিজের সঙ্গে নিজের কম্পিটিশন। এবারও কি কম্পিটিশন হচ্ছে?

মুহিত: এবার তো হায়েস্ট কম্পিটিশন। এবার বিষয়টা হলো ‍টু গিভ বেস্ট বাজেট। ইভেনচুয়ালি আই অ্যাম কম্পিটিটিং উইথ প্রিভিয়াস বাজেটস আই হ্যাভ এভার গিভেন। এজন্য ৭/৮ বাজেটের সবগুলো আই হ্যাভ রিভিউড অল অফ দেম। অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকারের দুই মেয়াদে আমি যে বাজেটগুলো দিয়েছি, তার সবগুলোরই সমন্বিত বাজেট হবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট।

আপনার এবারের বাজেটে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ থাকবে?

মুহিত: পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের পারফর্মেন্স ইজ ওয়ান অফ দি বেস্ট ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। যেটা সারা পৃথিবী অ্যাকসেপ্ট করেছে। আমার প্রথম বছরে আমি ৭০০ কোটি টাকা দিই পরিবেশ রক্ষার জন্য। একটা বিশেষ বাজেট। তখন বলেছিলাম যে, এটা টেম্পরারি বাজেট। এরপর এটা ইমপ্রুভ হয়েছে। আমাদের উদ্যোগ যখন ইন্টারন্যাশনালি অ্যাক্লেইমড হয়েছে, তখন সেটা থেকে বসে যাওয়ার ইচ্ছা আমার নাই, থাকতে চাই। আমি এটা কন্টিনিউ করেছি, এবারও করব।

আপনার এবারের বাজেটে আর কী কী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকবে?

মুহিত: হিন্দু সম্প্রদায় গত বছর বেশ অভিযোগ করে এবং তাদের অভিযোগে ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগারস ইনক্লুডেড। আমরা মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য নরমাল বাজেটের বাইরে যে সাহায্য করি, তারা তার সামান্য অংশ পায়। সো আমি তাদের জন্য গতবার ৫০-৬০ থেকে ২০০ কোটি দিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে যে একটা মেজর কমিউনিটি, তাদের জন্য আমরা প্রপার কাজ করিনি। আরও কিছু করা উচিৎ। মুসলমান হিসাবেও আমাদের এটা আরও ভাল করা দরকার। বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কমিউনিটির জন্য এটা ঠিক আছে, তারা কম। তারা যে টাকা পায় সেটা যথেষ্ট।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

হিন্দুদের যে ধর্মস্থানগুলো আছে, আমাদের দেশে সেগুলোকে যদি দিতে হয়, তাহলে অনেক কম পড়ে, যেটা দুর্ভাগ্যজনক। এ কারণে তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। অনুন্নত এলাকায়, চরাঞ্চল এবং প্রান্তিক এলাকার জন্য বিশেষভাবে দেখছি।

আলটিমেটলি ব্লু ইকোনমির জন্য বিশেষ কিছু করতে পারছি না। কারণ সেখানে আমাদের ক্যাপাসিটি খুব কম। প্রস্তুতি যেমন পর্যাপ্ত না, অন্যান্য বিষয়েও অগ্রগতি তেমন হয়নি। এটাকে আমি যদি ঠিক করতে পারতাম, খুব খুশি হতাম। আমরা অনেক সমুদ্রসীমা পেয়েছি, কিন্তু এটা মোস্টলি এক্সপ্লয়টেড বাই দি আদারস। এটার পরিবর্তন করাটা অনেক জটিল। সম্ভবত এ কারণে কোনো বিদেশি পার্টনার্স কোঅপারেট করছে না, যারা সি অ্যাক্সপেরিয়েন্সড।

গ্যাস-বিদ্যুতের রেট বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব কি থাকবে?

মুহিত: না। এখানে যেটা থাকবে আমি ইতোমধ্যে বলেছি, গ্যাসের দাম বাড়াতেই পারি। আমরা এখন বিদেশ থেকে সরবরাহের উপর নির্ভরশীল। দেশীয় উৎপাদনের ফলে যে ছাড় দিই সেটার কোনো সুযোগই নাই। উই ক্যাননট ডিটারমাইন দ্য প্রাইস নাউ, বিকজ উই হ্যাভ ‍টু সি। সম্ভবত পরবর্তী বছরের জুন-জুলাইয়ের দিকে এটা আসবে, এলএনজি। সেসময়ে আগে আমরা প্রাইস নির্ধারণ করব। নট অনলি দি গ্যাস প্রাইস উইল বি ডিটারমাইন্ড বাই দিস ডিসেম্বর অর জানুয়ারি, আই অ্যাম গিভিং দ্য স্টেটমেন্ট, প্রাইস উইল বি হাই, নট রিপ্রেজেন্টেবল। সেখানে আমরা যেটা করব, আমরা এন্ট্রি লেভেলে অনেক শুল্ক-টুল্ক আছে, এগুলোকে ফুললি রিভাইজ করতে হবে।

জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলেছিলেন।

মুহিত: এতে দুই মাস সময় লাগতে পারে।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

আমার যে একটা কমিটি আছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি, তারা একটা সভা করেছিল কয়েক মাস আগে। সেখানে আমরা দেখলাম যে আন্তর্জাতিক প্রাইস রিডাকশনের ফলে আমাদের ব্যবসটাকে উই শুড গিভ সাম ট্যারিফ। এ বিষয়ে আমি সে সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের প্রস্তাব থাকলে দেন’। তো প্রস্তাব দিতে পারিনি, প্রস্তাব দিব জুন মাসে। বাজেট উত্থাপনের পর আই উইল হ্যাভ এ মিটিং অব দি কমিটি। আমরা বড় ধরনের রিডাকশনের কথা বলছি না, এখন আমাদের এখানে প্রতি ব্যারেল তেলের দর ৮০ ডলার আছে। কমে যেখানে এসেছিল তার চেয়ে ২৪ থেকে ২৫ ডলার বেড়ে গেছে। আমরা ৮০ ডলার থেকে হয়ত ১৫ পয়েন্টের মতো কমাতে পারি, এর বেশি কমবে না। প্রধানমন্ত্রীও তার মতামত দেবেন।

এবার আয়কর নিয়ে কিছু বলুন। করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হবে কি?

মুহিত: করমুক্ত আয়সীমা যে আড়াই লাখ টাকা আছে, সেখান থেকে এবার কিছুটা বাড়তে পারে। এখানে ফিক্সড হবে, আর ভবিষ্যতে চেইঞ্জ হবে না।

কর্পোরেট ট্যাক্সে কোনো পরিবর্তন আসবে কী?

মুহিত: আলটিমেটলি আমি কর্পোরেট ট্যাক্সের রেট পরিবর্তন করতে পারি নাই, পরিবর্তনের চিন্তা করেছিলাম। আমার মনে হয়, এতে অলমোস্ট কিছু হবে না। একটা হয়ত রেট চেইঞ্জ করতে পারি, আই ডোন্ট নো।

এটার একটা অসুবিধা হচ্ছে কি, আমি যদি চেইঞ্জ করি, আই শুড স্টে অ্যারাউন্ড ফর অ্যা লংগার পিরিয়ড, টু রিকুপ দ্য লস অব হোয়াটএভার রিটার্ন। এটা নাই তো।

অর্থ পাচার রোধে কী পদক্ষেপ নেবেন?

মুহিত: টাকা পাচার রোধে আমরা যেটা করি, আমার একটি কমিটি আছে, আমাদের রুলস রেগুলেশনস ইত্যাদি আর অল ফিনিশড, ইনটেলিজেন্স উইংস আর ওয়ার্কিং। সেভাবে কাজ চলবে…।

বিনিয়োগ খরা কাটেনি। আপনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে বার বার কথা বলেছেন। এবারের বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি? বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কী ব্যবস্থা নেবেন?

মুহিত: সরকারি বিনিয়োগ কিন্তু বেশ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে আমরা আমাদের এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) কমাইনি, পুরোটাই বাস্তবায়ন করছি।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

তবে এ কথা ঠিক যে, আমাদের বেসরকারি বিনিয়োগে খুব একটা গতি আসেনি। কেন আসছে না, সেটার সঠিক কারণ আমিও খুঁজে পাচ্ছি না। দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল, হরতাল-অবরোধ নেই। বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। তারপরও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। আর একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, দেশি বিনিয়োগ না বাড়লে, বিদেশি বিনিয়োগও বাড়ে না।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমাবেন বলছেন। কতদিনে কমাবেন?

মুহিত: আমি জুন মাসেই এটা কমাব। ৫ জুনের পর আমার একটা মিটিং হবে, সেখানে এটা নিয়ে আলোচনা হবে।

বাংলাদেশের কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হতে আর কতদিন সময় লাগবে?

উই আর ওয়েলফেয়ার স্টেট এট দিজ মোমেন্ট। যে হারে আমরা দারিদ্র্য কমিয়েছি এবং অতি দারিদ্র্য কমিয়েছি, এটা সব দিক থেকে ভালো অবস্থান। সো উই আর অ্যা ওয়েলফোর স্টেট…আমরা পরিপূর্ণ ওয়েলফেয়ার স্টেটে সেদিন যাব, যেদিন দারিদ্র্যের হার ৭-৮ শতাংশের বেশি যাবে না। ২০২৪-২৫ সালের দিকে সে অবস্থায় যাবে।

ব্যাংক খাত নিয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন?

ব্যাংকিংয়ে যেটা করছি, উই হ্যাভ ইমপ্রুভড অ্যান্ড আমরা ব্যাংকিং ম্যানেজমেন্ট বোর্ডকে এক্সপান্ড করছি... ডিফল্ট রেট (খেলাপি ঋণ) হ্যাজ বিন রিডিউসড সাবসটেনশিয়ালি। তবে সাড়ে ৯-১০ শতাংশ যে ডিফল্টার, এটাও অনেক বেশি। তবে এটাকে কমানোর উদ্যোগ থাকতে হবে। ডিফল্টের মূল কারণ কিন্তু দুর্নীতি। করাপশন অব পার্টিজ, ম্যানেজমেন্ট অব দি ব্যাংক আর গ্রহীতা তারা যোগসাজশ করে এটা করে।

আপনার এবারের বাজেটে রাজস্ব আয়ের চাপটা কোন শ্রেণির মানুষের উপর বাড়ছে?

মুহিত: আমরা চেষ্টা করছি, দৌজ হু পে ট্যাক্সেস তাদের উপর চাপটা যেন বেশি না বাড়ে। এক্সপান্ডিংটা হল সেটার লক্ষ্যমাত্রা।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

এবারের বাজেটে আমি আমার নিজের জন্য দুটি টার্গেট ঠিক করেছি... ওয়ান টার্গেট দি নাম্বার অব ট্যাক্স পেয়ারস; অ্যানাদার টার্গেট ইজ টিআইএন রেজিস্ট্রেশন। সেটা আমি করতে পেরেছি। আমার আশা, ভবিষ্যতে এই এরিয়া থেকে আই উইল গেট মোর ট্যাক্সেস।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে বিস্তৃতির কথা বলেছেন। কীভাবে সেটা করবেন?

মুহিত: বয়স্ক-বিধবাসহ উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে।ভাতাও সামান্য বাড়ছে, বেশি কিছু না। প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।

নতুন বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার (জিডিপি) কত ধরা হবে?

মুহিত: এবার আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরছি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরেছিলাম। পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রাথমিক তথ্য যেটা দিয়েছে, তাতে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জিত হবে বলছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আমাদের লক্ষ্য পূরণ হতে চলেছে। আগামী বাজেটের লক্ষ্যও অর্জিত হবে আশা করছি।

কোনো কিছু না করতে পারার আক্ষেপ আছে কি?

মুহিত: জেলা সরকার করতে পারিনি- এটাই একমাত্র দুঃখের বিষয়। তবে এটা হবে, না হলে সমৃদ্ধ দেশ হতে পারবে না। এটা কেবল আমার নয়, আমার প্রধানমন্ত্রীরও রিয়েলাইজেশন।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে আপনার তুষ্টির জায়গা কোনটি?

মুহিত: বছর বছর বাজেটের আকার বাড়ানোই আমার কাছে সবচেয়ে বড় তুষ্টির বিষয়। ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট আমি ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি অঙ্কে নিয়ে যাচ্ছি। আগামী বাজেট পাঁচ লাখ কোটিতে নিয়ে যাব। এটাই শেখ হাসিনার সরকারের কৃতিত্ব। আর আর্থমন্ত্রী হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় তুষ্টির জায়গা। আর ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারলে তা আরেকটি বড় সাফল্য হবে।

[অনুলিখন: মাসুম বিল্লাহ; ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান]