ভ্যাট ১৫ শতাংশই থাকছে: মুহিত

ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে তিন সপ্তাহ আগে ভ্যাটের হার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাজেটের পাঁচ দিন আগে আবার সেই ১৫ শতাংশের কথাই বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2017, 01:15 PM
Updated : 27 May 2017, 04:34 PM

শনিবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে কয়েকজন সাংবাদিককে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “অনেক আলোচনা করে আমরা শেষ পর্যন্ত ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশই রাখছি।”

তবে ভ্যাটমুক্ত টার্নওভারের সীমা এবার বাড়ানো হচ্ছে এবং দুই এক দিনের মধ্যে নতুন সীমা ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি।

বর্তমানে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার (বার্ষিক বিক্রি) ভ্যাটমুক্ত। আর ৩০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য।

এবার ৮০ লাখ টাকার ওই সীমা বাড়িয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বা তার বেশি করা হচ্ছে জানিয়ে মুহিত বলেন, সেক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ বা ৫ শতাংশ করা হতে পারে।

“অর্থাৎ, আমরা এই বাজেটে ছোট ব্যবসায়ীদের বিশেষ ছাড় দিচ্ছি,” বলেন অর্থমন্ত্রী।   

তিনি বলেন, দেশে আট লাখ নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও ভ্যাট দেয় মাত্র ২৫ থেকে ২৬ হাজার।

“এই সংখ্যা আমরা আগামী বছর দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৫০ হাজারে নিয়ে যেতে চাই।”

মুহিত দাবি করেন, এই ভ্যাট কাঠামোতে বাজারে পণ্যমূল্য কোনো অবস্থাতেই বাড়ার কথা নয়।

“রোজার কারণে ব্যবসায়ীরা কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভ্যাটের কারণে বাড়ার কারণ নেই।”

এ সরকারের সময়ে তার দেওয়া কোনো বাজেটের পরপরই দ্রব্যমূল্য বাড়েনি বলে মুহিতের দাবি। 

২০১২ সালের ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ অনুযায়ী ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করার কথা ছিল গত বছরের ১ জুলাই থেকে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা পিছিয়ে দেয় সরকার।

তখন বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের দাবির কারণে এবারও যে তা হচ্ছে না, সে ইংগিত পাওয়া যায় গত ১০ মে। অর্থমন্ত্রী সেদিন ভ্যাট আইন সংশোধন করে এর হার নামিয়ে আনার কথা বলেন।

এরপর গত ২৪ মে তিনি জানান, ভ্যাটের হার ঠিক করতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। কিন্তু সেই আলোচনার পর শনিবারি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের সিদ্ধান্তেই অটল থাকার কথা জানালেন মুহিত।

ভ্যাটের হার কমানোর যুক্তিতে ব্যবসায়ীরা বলে আসছেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে, মুদ্রাস্ফীতি হবে। আবার তা দিতে আগ্রহী হবেন না ব্যবসায়ীরা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লড-সিপিডির সুপারিশেও বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে ভ্যাটের হার ১২ শতাংশ রাখাই যুক্তিযুক্ত হবে।

কিন্তু মুহিত বলছেন, “বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং কঠিন বিষয় হচ্ছে ভ্যাট। ২০১২ সালে আমরা ভ্যাট আইন পাস করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারিনি। ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমালে সামান্য কমাতাম, কিন্তু সেখানে হিসাবের অনেক অসুবিধা হত। ভ্যাটের রেট ইউনিফর্ম হবে এবং সেটা ১৫ শতাংশই থাকবে।”

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, যার মধ্যে মূসক বা ভ্যাট থেকেই ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা আসবে বলে মুহিত আশা করেছিলেন। ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও রাজস্ব আদায় এবার গত অর্থবছরের তুলনায় বেশি হবে বলে এনবিআর কর্মকর্তারা আশা করছেন।

আগামী অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা ধরে যে বাজেট মুহিত সাজাচ্ছেন, সেখানে কত টাকা রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা থাকছে আর তার কত শতাংশ ভ্যাট থেকে আসবে- সেই হিসাব জানতে ১ জুন বাজেট বক্তৃতা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

মুহিত জানান, আগামী ১ জুন বেলা দেড়টায় তিনি জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা শুরু করবেন; সন্ধ্যার আগেই বাজেট বক্তৃতা শেষ হবে।

এবার তার বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম হবে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’। আগামী ২৯ জুন সংসদে বাজেট পাস হবে।

নতুন বাজেটের আকার চার লাখ টাকার বেশি হবে জানিয়ে মুহিত বলেন, “মানব সম্পদে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হবে। বরাদ্দ বেশি থাকবে পরিবহন ও জ্বালানি খাতে। প্রতিবন্ধীদের বিষয়েও এবার বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে।”

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

বছর বছর বাজেটের আকার বাড়াতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করে টানা নয় বার এবং মোট এগারোটি বাজেট দিতে যাওয়া মুহিত বলেন, “৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট আমি চার লাখ কোটি টাকার বেশি অংকে নিয়ে যাচ্ছি। আগামী বাজেট পাঁচ লাখ কোটিতে নিয়ে যাব। এটাই শেখ হাসিনার সরকারের কৃতিত্ব। আর আর্থমন্ত্রী হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় তুষ্টির জায়গা।”

আর ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারলে তা ‘আরেকটি বড় সাফল্য’ হবে বলে মনে করেন ৮৩ পেরুনো এই রাজনীতিবিদ।

সেক্ষেত্রে ব্যর্থতার জায়গা কোনটি- এই প্রশ্নে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুহিত বলেন, “জেলা বাজেট। এটা আমি করতে পারিনি। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে না পারলে সত্যিকার অর্থে দেশের টেকসই উন্নয়ন হবে না।”

বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের দক্ষতার অভাব আছে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ঠিক। আমাদের দক্ষতার অভাব আছে। কিন্তু এবারের বাজেটের আকার ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত হিসাব করে আমরা যা পাচ্ছি, তাতে দেখা যাচ্ছে ৩ লাখ ১৭ হাজার থেকে ৩ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার মতো বাস্তবায়ন হবে।”

নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “বর্তমানে এটা আড়াই লাখ টাকা আছে। এবার একটু বাড়ানো হবে। তবে এবার বাড়ানোর মধ্য দিয়ে একটা ‘পারমানেন্ট লিমিট’ এর ব্যবস্থা করা হবে, যাতে বছর বছর না বাড়াতে হয়।”

তবে একটি খাত ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে করপোরেট ট্যাক্স অপরিবর্তি থাকবে বলে আভাস পাওয়া যায় অর্থমন্ত্রীর কথায়।