শনিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক আয়োজিত এক সম্মেলনের উদ্বোধনীতে ‘আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রচেষ্টাগুলোকে বাস্তব ফলমুখী’ করার উপর জোর দেন তিনি।
নাকানডালা বলেন, বিমসটেক সাতটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতির সঙ্গে কাজ করছে, যাদের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ থাকায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।
১৯৯৭ সালে বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক) গঠিত হয়। ব্যাংকক ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড এই উদ্যোগ শুরু করে; পরে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান এতে যোগ দেয়।
আশানুরূপ অগ্রগতি না হলেও এই ২০ বছরে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটা ‘ভিত’ তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে বিমসটেক মহাসচিব বলেন, গত তিন-চার বছরে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হয়েছে।
সাম্প্রতিক অগ্রগতির উদাহরণ হিসেবে তিনি গত বছর অক্টোবরে বিমসটেক লিডারস রিট্রিটের উদাহরণ তুলে ধরে নাকানডালা বলেন, ওই অনুষ্ঠান থেকে আঞ্চলিক সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে ‘শক্তিশালী রাজনৈতিক ঘোষণা’ আসে।
ওই বৈঠকে নেওয়া উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিমসটেক অঞ্চলে একটি আন্তঃসংযুক্ত পাওয়ার গ্রিড নির্মাণের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলা।
বিশ্বজুড়ে ‘বাণিজ্য উদারীকরণ ও বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে’ সোচ্চার আওয়াজ উঠার বিষয়টি তুলে ধরে আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের এসব উদ্বেগ বিবেচনা করার আহ্বান জানান নাকানডালা।
ইন্ডিয়ান স্টাডিজ সেন্টার ও বিমসটেক সচিবালয়ের যৌথ আয়োজনে চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটিতে ‘বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে সাংস্কৃতিক সংযোগ জোরদার’ বিষয়ে তিনব্যাপী আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। এতে সহযোগিতা করছে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নিজেদের মধ্যে বন্ধন আরও জোরদার করতে নাকানডাল ইতিহাসের ওই সময়ের দিকে দৃষ্টি দিতে জোর দেন, যখন বঙ্গোপসাগরের এই অঞ্চল ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ছিল।
সম্মেলনের উদ্বোধনীতে চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটি কাউন্সিলের অধ্যাপক ইমেরিটাস খুনইং সুচাদা কিরানদানা ও থাইল্যান্ডের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিষয়ক উপ মহাপরিচালক একসিরি পিন্টারুচি বক্তব্য দেন।
পিন্টারুচি বলেন, “থাইল্যান্ডের হৃদয়ের খুব কাছের বিমসটেক।”
জ্ঞানের বিনিময়, ইতিহাস ও ঐতিহাসিক সাফল্যের স্মৃতিচারণ ও অভিন্ন উত্তরাধিকার সম্পর্কে আরও স্পষ্ট জানাশোনার ক্ষেত্র হিসেবে এই সম্মেলন আয়োজনকে স্বাগত জানান তিনি।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সুনীল এস অম্রিতের শিরোনাম বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
বিমসটেক গঠিত হওয়ার সাত বছর পর ২০০৪ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ নিজেদের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়ে একমত হয়।
তবে এ ধরনের অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় সেই উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
বিমসটেকের তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলন হয় ২০১৪ সালে মিয়ানমারের রাজধানী নে পি দো তে। ওই সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের ১৪টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে।
প্রায় দুই বছর আগে বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী ঢাকার গুলশানে বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় যাত্রা শুরু করে।