বাংলাদেশের এগিয়ে চলার কাহিনী হার্ভার্ডে

নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে শুরু হয়েছে দুই দিনের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স’।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2017, 09:49 AM
Updated : 12 May 2017, 11:33 AM

জাতিসংঘ, ইউএনডিপি, বিশ্ব ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা বৃহস্পতিবার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ল’ স্কুল মিলনায়তনে এ সম্মেলনের উদ্বোধনে অংশ নেন।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ‘করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড হেলথ’ সেন্টারের সহযোগিতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট’ (আইএসডিআই) আয়োজিত এ সম্মেলনের বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সম্ভাবনার নানা দিক।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জীবনমানের উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতি অটুট রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ‘অবিস্মরণীয় অগ্রগতি’ সাধন করেছে। বেশ ক’বছর স্থিতাবস্থায় থাকার পর সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও বেড়েছে।

“এই এগিয়ে চলা সম্ভব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে গোটা জাতি উন্নয়নের সাথে একাত্ম হওয়ার  কারণে। এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অন্তর্ভুক্তি সব মহলে প্রশংসিত হচ্ছে।”

বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রম পরিবেশ নিয়ে ‘কোনো কোনো মহলে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন মসিউর।

তিনি বলেন, “গত আট বছরে নানা প্রতিকূলতার পরও ন্যূনতম মজুরি বেড়েছে কমপক্ষে তিনবার। বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির এমন নজির উন্নয়নশীল বিশ্বে কমই দেখা যায়।”

গার্মেন্ট শিল্পের কর্ম-পরিবেশ নিরাপদ করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, “নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এ পর্যায়ে উপনীত হতে বাংলাদেশের সাফল্য, সামর্থ্য এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে ধারণা দিতে এ কনফারেন্সের গুরুত্ব অপরিসীম।”

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কীভাবে এগোতে পারে, সে বিষয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক মতবিনিময় হবে এই সম্মেলনে।

“এসডিজি অর্জনের গতি কীভাবে ত্বরান্বিত করা যায়, কোন মন্ত্রণালয়ের কী কাজ হওয়া উচিৎ- সেসব নির্ণয় করা হচ্ছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এমডিজির মত এসডিজি সীমিত কোনো বিষয় নয়।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এমডিজিতে যেখানে দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্য ছিল, এসডিজিতে দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলা হয়েছে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন তথা মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের প্রসঙ্গ রয়েছে।

“এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা নিজ নিজ মতামত উপস্থাপন করবেন এবং বাংলাদেশে আমরা কীভাবে এগোচ্ছি- তা নিয়ে খোলামেলা মতবিনিময় হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন-পরিক্রমায় এটি অপরিসীম ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।”

আজাদ বলেন, এসডিজি কার্যক্রমের অগ্রগতি নির্ণয়ে বাংলাদেশ একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যাকে বলা হচ্ছে ‘এসডিজি ট্র্যাকার’।

এটি পুরো বিশ্বেই আগ্রহের জন্ম দিয়েছে বলে জানান সাবেক মুখ্য সচিব।

সম্মেলনে উপস্থিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে তার ব্যাংকের অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে বলেন, এখন পর্যন্ত ৭০টি শাখা খোলা হয়েছে, সবকটিই অনলাইনে এসেছে।

“এখন আমরা ব্যাংকের শাখা প্রত্যন্ত অঞ্চলে খোলার চেষ্টা করছি। অবশ্যই সেগুলোতেও অনলাইন সার্ভিস থাকবে।”

আয়োজক সংস্থা আইএসডিআইর নির্বাহী পরিচালক ইকবাল ইউসুফ বলেন, “উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সেই গতি ত্বরান্বিত করতে সর্বমহলের সম্পৃক্ততার বিকল্প নেই। সে তাড়না থেকেই আমরা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই সম্মেলনে মিলিত হয়েছি।”

‘উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন’ শীর্ষক এই সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের ড. ইলিন ম্যাকনিলি ও অধ্যাপক র‌্যামন এলবার্টো পাইন, হার্ভার্ড ল’ স্কুলের লেবার অ্যান্ড ওয়ার্ক ফাইল প্রোগ্রামের জন ট্রাম্পবোর, এমআইটির অধ্যাপক ইকবাল ও রবার্ট স্টনার, ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের আবাসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ন্যাম ফ্যাম, হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের মাইকেল উলকক, ম্যাককিনসের স্যাম সামদানী, হার্ভার্ড স্কুল অব এডুকেশনের ক্রিওস ডেডি, গ্লোবাল স্টেম এডুকেশনের লারিসা কে সেলকিন, আইকেজি উপদেষ্টা ইসা জিমারম্যান এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা টম লারস্টেন।

এছাড়া জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, সামিট গ্রুপের প্রধান আজিজ খান, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তা ডেভিড মিল, আয়োজক সংগঠনের কর্মকর্তা আবু হাসনাত, জাতিসংঘে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য সম্পর্কিত কর্মকর্তা সোনিয়া বালসাজার, বাংলাদেশের প্রতিনিধি অনির চৌধুরী ও কবির বিন আনোয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বিভিন্ন পর্বে আলোচনা করবেন।

এসডিজি ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা, উদ্যোক্তা তৈরি, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, জ্বালানি নিরাপত্তা, শিল্পের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে এসব সেশনে আলোচনা হবে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমর্থনে গত ছয় বছর ধরেই হার্ভার্ডে এই সম্মেলন হচ্ছে।