সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজের পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি

ইসলামী ব্যাংককে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কাজে ব্যবহারের ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে অভিযোগ করে এর ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেছেন, তাকে পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগের জন্য হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ফেইসবুকে আসা তার পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2017, 03:56 PM
Updated : 11 May 2017, 04:08 PM

১১ই মে, বৃহস্পতিবার ২০১৭

বন্ধুরা ও ইসলামী ব্যাংকের কোটি কোটি সম্মানিত গ্রাহক,

আসসালামু আলাইকুম।


গত ৬ই মে ২০১৭ ইসলামী ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক, ইসি চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আমার ১ বৎসর পূর্ণ হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম ব্যাংক। এই ব্যাংক দেশের ৩২ শতাংশ অর্থনীতির উপরে প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন গভর্নর বিভিন্ন সময় বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের উপর নির্ভর করে উন্নয়নের অর্থনীতি এবং উন্নয়নের রাজনীতির উপর নির্ভর করে রাষ্ট্র ক্ষমতার ভারসাম্য।

১ কোটি ২০ লাখের বেশি আমানতকারীর সর্বস্ব ১০ লাখ বিনিয়োগ গ্রহীতাকে দেয়া হয়েছে। কাকে দেয়া হয়েছে, তারা ঐ টাকা পুনরায় জঙ্গি অর্থায়ন অথবা সরকারবিরোধী রাজনীতিতে দিয়েছে কিনা তা আমরা মনিটর করতে শুরু করি।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ‘সোনার বাংলাদেশ’ বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ‘সোনার বাংলাদেশ’ সেই ভিশনকে সামনে নিয়ে আমি ও নতুন পর্ষদ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমান ৫ লাখ হতদরিদ্র মানুষকে ঋণ দেয়ার কার্যক্রম শুরু করি। আরো ৫ লাখ এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি) যুবক ও নারী উদ্যাক্তাকে বিনিয়োগ প্রদানের নির্দেশ দিই, যাতে গরিবি হঠানোর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সমর্থন আদায় করতে পারি। তখনি শুরু হয় ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে প্লাস-মাইনাসের ষড়যন্ত্র।

যেহেতু ১ কোটি ২০ লাখ আমানতকারী তাদের আমানত, বিশ্বাস ও সেন্টিমেন্ট আমাদের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন। আমি ও নতুন পর্ষদ যখন তাদেরকে সাথে নিয়ে উন্নয়নের অর্থনীতির কাজে নেমে পড়ি তখনি শুরু হয় ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্রবিরোধী এই ষড়যন্তের সাথে জড়িত আছে ব্যাংকের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু সরকারি অফিসার। ষড়যন্ত্রটি এত জটিল যে অনতিবিলম্বে গোয়েন্দা সমূহের সাঁড়াশি তৎপরতা রাষ্ট্রের স্বার্থে অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। এখানে শুধু কয়েকটি স্পর্শকাতর বিষয় তুলে ধরা হল-

প্রথমত, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নিয়ে যখন পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয় তখন এ সরকার ইসলামবিদ্বেষী এবং এই পর্ষদও ইসলামবিদ্বেষী- এরূপ প্রচারণা সারাদেশে চালানো হয়। এবং এই প্রচারণা সত্য প্রমাণ করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলামী ব্যাংকের ক্যালেন্ডার থেকে ‘শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংক’ শব্দটি সরিয়ে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদকে বেকায়দায় ফেলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ভোট নষ্ট করার ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়। আমি ও নতুন পর্ষদ এই ষড়যন্ত্রকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও আমাদের অমতে ঐ সমস্ত (৫ থেকে ৭ লাখের বেশি) ক্যালেন্ডার বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

দ্বিতীয়ত, ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে ১৩ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ৯৯ শতাংশ আদর্শ ও নিবেদিত ব্যাংকার। ইসলামী ব্যাংকিংকে ব্রত হিসেবে নিয়ে সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন এদের অনেকে। ইসলামী ব্যাংকটাকে সার্বজনীন ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এই ৯৯ শতাংশ কর্মকর্তা নতুন পরিচালনা পর্ষদকে সহযোগিতা করছে। কিন্তু ব্যাংকের হাতে গোনা (২ ডজনের কম) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজে মামলা রয়েছে, তারা এসে দখল করে নেয় ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা। প্রথমে তারা পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরাতে চায়। পরবর্তীতে পর্ষদসমূহের সম্পূর্ণ অবাধ্য হয়ে পড়ে। কেবল মাত্র বিভিন্ন পর্ষদে তাদের দ্বারা উত্থাপিত এজেন্ডার বাহিরে কোন নির্দেশনা পরিপালন করতে অপারগতা প্রকাশ করে। সরকারবিরোধী কার্যকলাপে সক্রিয় কর্মচারীদের ভাল ভাল পোস্টিং দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী রাজনীতির সুযোগ করে দেয়া হয়। গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকর্তাদের ঢাকার বাহিরে অন্যত্র বদলির নির্দেশনা অগ্রাহ্য করা হয়।

তৃতীয়ত, বুদ্ধিজীবী দিবসে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পরিচালনা পর্ষদকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা অমান্য করা হয়। একইভাবে ২৬শে মার্চ যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয় নাই।

উপরস্তু শুরু হয়ে যায় ব্রাঞ্চে ব্রাঞ্চে অফিসের পরে গোপন মিটিং, ইয়ানত, অর্থাৎ চাঁদা সংগ্রহ ও ক্যাডারদের মধ্যে বিতরণ।

চতুর্থত, এ বছরের মুনাফা থেকে ৭০ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হয় ইসলামী ব্যাংকের বিতর্কিত জাকাত ফান্ডে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির সকলে আমাকে প্রশ্ন করেন ইসলামী ব্যাংক হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের নিট মুনাফা থেকে কেন জাকাত কর্তন করে? মুসলমান আমানতকারীরা প্রশ্ন করেন, “আমার জাকাত আমি দেব যাকে ইচ্ছা তাকে দিব। কেন আমার জাকাত বিতর্কিত জায়গায় বিতরণ করা হচ্ছে”।

এমতাবস্থায় সর্বসাধারণ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তরের কাছে দাবি করছে, ব্যাংকটি যেন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না হয় এবং পুনরায় যেন ব্যাংকটির ম্যানেজম্যান্ট রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির হাতে ফিরে না যায়।

বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের এত বিরাট প্রত্যাশা আমার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব কি?

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, 

ইসলামী ব্যাংক বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ব্যাংকও বটে। শত কল্পনা-জল্পনার মাঝে আমার স্থান থেকে আমি ব্যাংকটিকে বদনামের বাহিরে আনতে চেষ্টা করেছি, চেষ্টা করেছি ব্যাংকটিকে যেন কেউ রাষ্ট্রবিরোধী কাজে ব্যবহার করতে না পারে। আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্ভীকভাবে কাজ করেছি।

সফলতা-বিফলতার বিচার ইতিহাসের কাঁধে ছেড়ে দিলাম।

এখন একদিকে অশুভ শক্তি ইশারায় আমার শত চেষ্টার পরেও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি পুনর্বাসিত হয়েছে এবং জাতির পিতার খুনীদের সাথে সংশ্লিষ্টরা ফিরে আসছেন নেতৃত্বে। আগামী বছর এই ব্যাংকটিকে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে ব্যবহার করার নীল নকশা সম্পাদন হচ্ছে।

অপর পক্ষে আমার উপর সরে দাঁড়ানোর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে নিয়ে প্লাস-মাইনাসের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাই পরিচালনা পর্ষদ ও ভাইস চেয়ারম্যানের পদে দায়িত্ব পালন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার সরে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সব সময় আপনাদের দোয়া ও প্রত্যাশা মাথায় রেখে কাজ করেছি। নিজেকে আপনাদের একজন মনে করি। কখনো আপনাদের না জানিয়ে গোপনে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। কারণ আমি জনতার মানুষ। নিজেকে জনতার সেবায় নিয়োজিত রেখেছি।

এখন আপনাদের সমর্থন প্রয়োজন। যাতে অন্য কোথাও আপনাদের ও জনগণের পুনরায় সেবার সুযোগ পাই।

অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম (পারভেজ)

ভাইস চেয়ারম্যান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড