ছত্রাকজাতীয় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানগাছের পাতার কালো দাগ দেখা দেওয়ার পর তা ধূসর হয়ে যাচ্ছে; ধীরে ধীরে পুরো গাছ ধারণ করছে সাদা রঙ। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে নতুন নতুন বোরো খেত।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন, জগন্নাথপুর ও বেগুনবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।
“ধানের শীষ বের হওয়ার পর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, উচ্চ আর্দ্রতা, দিনে গরম ও রাতে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।”
লক্ষণ
ধানগাছে পাতা, কাণ্ড ও শীষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথমে পাতায় ডিম্বাকৃতির দাগ দেখা যায়, যার দুই প্রান্ত লম্বা হয়ে চোখের আকৃতি ধারণ করে। দাগের মধ্যভাগ ছাই রংয়ের ও বাইরের দিকের প্রান্ত গাঢ় বাদামী হয়। অনেকগুলি দাগ একত্রিত হলে পাতাটি মরে যেতে থাকে।
ব্যবস্থাপনা
# জমিতে সব সময় পানি ধরে রাখতে হবে।
# কুশি অবস্থায় রোগটি দেখা দিলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে।
# প্রতি লিটার পানিতে ছত্রাকনাশক (টেবুকোনাজল ৫০% + ট্রাইফ্লুক্সিট্রোবিন ২৫%) যেমন: নাটিভো ৭৫ ডব্লিউপি ০.৬০ গ্রাম মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
# অথবা প্রতি লিটার পানিতে ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: ট্রপার ৭৫ ডব্লিউপি বা জিল ৭৫ ডব্লিউপি ০.৮১ গ্রাম বা অন্যান্য নামের অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় মিশিয়ে বিকালে স্প্রে করতে হবে।
পরবর্তী সতর্কতা
>> আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
>> ধান কাটার পর শুঁকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর বলেন, কী পরিমাণ জমিতে এ রোগ দেখা দিয়েছে তা নিরুপণের কাজ চলছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া কৃষকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হচ্ছে।
“বাড়িতে ছাগল, মুরগী যা ছিল বিক্রি করে আবাদ করেছি। এখন তো ধানের সাথে সব আশা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওষুধেও কাজ হচ্ছে না।”
জগন্নাথপুর এলাকার কৃষক সামশুল হক বলেন, গত বছর ৩ বিঘা জমিত ধান আবাদ করে ভাল ফল পেয়েছিলেন তিনি। এবার বোরো আবাদ করেছেন ৫ বিঘা জমিত।কিন্তু মঙ্গলবার সকালে তিনিও গাছের পাতায় দাগ দেখে শঙ্কিত।
নারগুনের পোকাতি গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তার ১০ বিঘা জমির ইরি আর বোরো ক্ষেত সাদা হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে ক্ষেতে ওষুধ ছিটাচ্ছেন। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হবে বুঝতে পারছেন না।
“কিন্তু এখন ক্ষেতের যে অবস্থা, আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় নাই,” বলেন ইসলাম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক কেএম মাউদুদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ৫৯ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪১ হাজার ২১১ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, “ব্লাস্ট রোগ এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। যাদের বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট দেখা গেছে, তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।”