‘বড়’ বাজেটের পক্ষে সিপিডি

প্রবৃদ্ধির গতি রাখা এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে বড় আকারের বাজেটের পক্ষে মত জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2017, 11:35 AM
Updated : 16 April 2017, 12:15 PM

সেই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বা অর্থ ব্যয় নিশ্চিত করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশও করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে নিজেদের নানা প্রস্তাব ও সুপারিশ রোববার তুলে ধরে সিপিডি।

আগামী জুন মাসে সংসদে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছেন বলে ইতোমধ্যে আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আওয়ামী লীগের সরকার ২০০৯-১০ সালে যে বাজেট দিয়েছিল, তার আকার এক লাখ কোটি টাকার নিচে ছিল। ধারাবাহিকভাবে তা বেড়ে বর্তমানে বেড়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বড় বাজেট দেওয়ার পক্ষপাতি মুহিত বলে আসছেন, তিনি আরও বড় আকারের বাজেট দিতে চান। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ৫ লাখ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য তাদের।

সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বলেন, “সরকার সবসময় একটা বড় বাজেটের কথা বলেন, সরকারি ব্যয় ও আয়ের কথা বলেন। আমরা তা পূর্ণভাবে সমর্থন করি।”

সিপিডির সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা সম্প্রসারণশীল বাজেটের পক্ষে। আমরা শুনেছি আগামী বাজেট ৪ লাখ ২০০ কোটি টাকার বাজেট হতে পারে, যা মাথা পিছু ২৫ হাজার হাজার টাকা বা ৩০০ ডলার মতো হয়। এটা উন্নয়নশীল বিশ্বের চেয়ে কম।”

নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে বড় বাজেটের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “এরকম পর্যায়ে অন্যান্য দেশগুলো ছিল, যারা দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছে।

“যেমন মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতেও এরকম সময়ে আমাদের মতো বাজেটই নেওয়া হয়েছিল।”

তবে বড় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, তা সরকারের নেই বলে সিপিডির পর্যবেক্ষণ।

মোস্তাফিজুর বলেন, “বড় বাজেট নেওয়া হচ্ছে কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে সেটাকে ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।”

“বড় বাজেটের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জায়গায় নিয়ে আসা উচিৎ। এক্ষেত্রে কোন এজেন্সির কতটা ব্যয় সক্ষমতা আছে সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া উচিৎ,” পরামর্শ দেন তৌফিকুল।

প্রতিরক্ষাসহ প্রত্যেকটা খাতে বাজেট ব্যয়ে স্বচ্ছতার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।  বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ কম সময়ে ব্যয়ের কৌশল বের করার উপরও তিনি জোর দেন।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দের বেশিরভাগ সরকারি কর্মচারীদের পেনশনে চলে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তৌফিকুল বলেন, “যতখানি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের জন্য (টার্গেট গ্রুপের জন্য) বরাদ্দ করা হচ্ছে না। আবার যে বরাদ্দ করা হচ্ছে তার একটা বড় অংশ সরকারের পেনশনের জন্য করা হচ্ছে।

“এবছর যেখানে পেনশনের জন্য আট হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল সেখানে বেতন স্কেল বৃদ্ধির কারণে তা সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু ব্য়স্ক ভাতার জন্য পরিকল্পনায় বলা হয়েছে সাড়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকা লাগবে, তা সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই আটকে আছে। এটা বাড়ানো সম্ভব হয়নি।”  

পেনশন স্কিমকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির কর্মসূচির বাইরে রাখার সুপারিশ করছেন সিপিডি।

“আমাদের প্রস্তাব হলো যে, বরাদ্দ (অন্য খাতে) দিয়ে ব্যয় করতে না পারার চেয়ে সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়ালে সামাজিক খাতগুলো সুসংহত হবে।”

তেলের দাম কমানোর সুপারিশ

আসছে বাজেট নিয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানোসহ বেশ কয়েটি সুপারিশ করেছে সিপিডি।

তৌফিকুল বলেন, “জ্বালানি তেলের দাম কমাতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে এটা বিশ্ব বাজারে কম থাকলেও আমাদের এখানে কমছে না।”

রপ্তানি ও রেমিটেন্স বাড়াতে টাকার মান কিছুটা কমানোর সুপারিশ করেন তিনি।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সুপারিশ জানিয়ে তৌফিকুল বলেন, “এটা সরকারি ব্যয়ের জন্য ভালো হবে। আবার ব্যাংকের জন্যও ভালো হবে।”

চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “সামনে বোরো আসবে। তখন হয়ত চালের দাম কিছুটা কমবে। কিন্তু সার্বিকভাবে মধ্যমেয়াদে আগামী অর্থবছরে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনে আমদানি করতে হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”

ব্যাংকের পরিচালনা ব্যবস্থা উন্নত করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

তৌফিকুল বলেন, “কয়েক বছর ধরেই আমরা বলছি ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি কমিশন গঠন করতে। প্রতি বছর সরকার জনগণের করের টাকায় যেভাবে ব্যাংকগুলোকে নিঃশর্তভাবে পুনঃমূলধনী করা হচ্ছে, এ বিষয়টি অবশ্যই থামাতে হবে।”

আগামী বাজেটে যদি এধরনের কোনো বরাদ্দ থাকলে তাহলে সেটার সঙ্গে অবশ্যই পারফর্মেন্সের শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর সুপারিশও করেছে তারা।

ব্র্যাক সেন্টারের এই অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উপস্থিত ছিলেন।