শুধু বেসিক ব্যাংক কেন, প্রশ্ন দুদক চেয়ারম্যানের

ঋণ কেলেঙ্কারিতে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় একজন আলোচকের উষ্মার প্রতিক্রিয়ায় শুধু এই ব্যাংকের অর্থ লোপাট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2017, 09:08 PM
Updated : 30 March 2017, 09:08 PM

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আয়োজনে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রয়াস’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিষয়টি তোলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান।

জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “মাঝে মাঝে আমার কষ্ট হয় যে, শুধু বেসিক ব্যাংক কেন, এমন কোনো ব্যাংক নেই যে জনগণের অর্থ তসরুপ করেনি। চার হাজার কোটি টাকা দেখলেন শুধু বেসিক ব্যাংকে। ১২ হাজার, ২০ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল? পত্রিকায় একটি রিপোর্ট এসেছে, এক লক্ষ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে কোথায় গেছে? এখন বেসিক ব্যাংককে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।

“বার বার বলছি, প্লিজ ওয়েট অ্যান্ড সি, আমাদেরকে সময় দেন। শুধু বেসিক ব্যাংকই নয়, গত এক বছরে চেষ্টা করেছি সব ব্যাংক নিয়ে। বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে ৫৬টি মামলা হয়েছে। কিন্তু একটি মামলারও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি, সেটা আমাদের ব্যর্থতা।”

আলোচনায় হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, “একথা আমার কাছে খুব অদ্ভূত মনে হয়েছে- অর্থমন্ত্রী ওপেনলি বলেছেন, কোনো গোপনভাবে নয়, প্রকাশ্য ওই কথা বলেছেন। দুদক যেহেতু অ্যাক্টিভ সেখানে আমাদের আশাও ছিল। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম। সেটা সরকারের একটা ভালো ব্যাংক ছিল। এখন এই অবস্থার জন্য একটি মানুষ (বাচ্চু) দায়ী, কিন্তু সেই ব্যক্তি ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এটা কেমন করে হতে পারে?

“ওই ঘটনায় দুই/চারজন যাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হয়েছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে জানি, তাদেরকে ঘাড় ধরে কাস্টডিতে নেওয়া হয়েছে, তারা এক পয়সাও দুর্নীতি করেনি।”

আব্দুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ব্যাংকটির দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর শাখা থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটে।

ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়াই জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়াসহ নিয়ম না মেনে ‍ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে তখনকার পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে ২০১০ সাল থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালে রাজধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে কমিশন।

আসামির তালিকায় ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা থাকলেও বাচ্চু বা পরিচালনা পর্ষদের কাউকে সেখানে রাখা হয়নি।

এ বিষয়ে দুদকের বক্তব্য, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই তাকে আসামির তালিকায় রাখা হয়নি।

তবে ‍দুদকের ওই তদন্তে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আলাদাভাবে এই বিষয়টি অনুসন্ধানও করা হয়।

সেই প্রতিবেদনে অর্থ কেলেঙ্কারিতে বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার কথা জানিয়ে বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ওই প্রতিবেদন দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে।

“এখন দেখা যাক কী হয়। পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিএনপি নেতা কামাল ইবনে ইউসূফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, লোক প্রশাসনের অধ্যাপক জেরিন রহমান খান, ড. ইফতেখারুজ্জামান, হামিম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ, সাংবাদিক কাজী সিরাজ, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মিজানুর রহমান খান বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিপিএটিসির সাবেক এমডিএস মো. শফি-উল-আলম।