এলডিসি উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়ানোর তাগাদা

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এলে বৈদেশিক বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে তা মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়ানোর তাগাদা দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2017, 05:58 PM
Updated : 16 March 2017, 06:11 PM

এজন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপর।

বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েশন স্ট্র্যাটেজি ফ্রম এলডিসি গ্রুপ’ শীর্ষক সেমিনারে এ পরামর্শ দেন বক্তারা।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বক্তব্য দেন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সম্মাননীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান।

সেমিনারে রেহমান সোবহান বলেন, “ইতোমধ্যেই আমরা নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছি। এখনও আমাদের প্রায় দশ বছর সময় হাতে আছে। এ সময়ের মধ্যে আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দর কষাকষির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। দিন শেষে কোনো বাধাই আমাদের জন্য কঠিন নয়।

“এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর আমরা দর কষাকষিতে এগিয়ে থাকতে পারলেই উন্নত রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে পারব।”

এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত যে সময় হাতে আছে তার মধ্যে রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করার পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেন তিনি।

অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, “আমাদের রপ্তানি এখনও দুই-একটি পণ্যের মধ্যেই আটকে আছে। এজন্য বেসরকারি খাতের ব্যর্থতাও রয়েছে। শুধু গার্মেন্ট শিল্পে উৎপাদন রাতারাতি চারগুণ বাড়াতে পারব বলে আমি মনে করি না। তাই আমাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করার পাশাপাশি নতুন পণ্য রপ্তনির জন্য প্রস্তুত করতে হবে। কৃষিখাতেও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।”

টেকসই উন্নয়নের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন রেহমান সোবহান।

তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এমনকি চীনও বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলেছে।

“তাই আমাদের মানসম্পন্ন শিক্ষাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।”

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তিনটি বড় সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দুটিতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সময়মতো সক্ষমতা অর্জনের পথে রয়েছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, মালদ্বীপ, ভানুয়াতুর মতো দেশ সক্ষমতা অর্জন করলেও তারা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসছে না। বাংলাদেশও এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসলে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

“কিন্তু আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। বিশেষ করে এলডিসির বাইরের দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যের সুবিধা পেতে হলে দর কষাকষি করার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।”

নতুন বাজার খোঁজার তাগাদা দিয়ে তিনি বলেন, ভারত এলডিসি থেকে বেরিয়ে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য বাড়িয়েছে। ফলে এর মাধ্যমে মাত্র কয়েক মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের দেশ থেকে তারা ২০-৩০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার আগে আমাদের বেশ কিছু প্রস্তুতির জন্য এগোতে হবে। আমাদের পণ্য ও রপ্তানির বাজার বহুমুখীকরণে গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে নতুন ও সম্ভাবনাময় বাজার খুঁজে বের করতে হবে। সেই সাথে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞানের প্রসার বাড়াতে হবে, উদ্ভাবনী মেধাস্বত্ত অধিকারের বিষয়েও কাজ করতে হবে।”

এর আগে মূল প্রবন্ধে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “২০১৮ সালে যে রিভিউ হবে তাতে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে।

“স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভঙ্গুরতা, মানব সম্পদের উন্নয়ন এবং জাতীয় মাথাপিছু আয়। এই তিনটি সূচকের মধ্যে প্রথম দুটিতে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ওই বৈঠকে উতরে যাবে। পরবর্তী বৈঠক ২০২১ সালের রিভিউতে তৃতীয়টিতেও বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে পার হতে পারে।

“হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০২৪ সালে একটা শক্তিশালী অবস্থান থেকে স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে বলে আমাদের বিশ্লষণে দেখা যাচ্ছে। তবে এটার মধ্যে অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। বাংলাদেশ যে বাজার সুবিধা পায় সেগুলো ২০২৭ সালের পর আর থাকবে না। যেসব বৈদেশিক সহায়তা পায় সেগুলোর শর্তও কঠিন হতে থাকবে।”

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা বিশ্ববাজারে টিকে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাজার ও রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এছাড়া তখন বৈদেশিক সাহায্যে সুদ হার বেড়ে যাবে। তাই এখন থেকেই বৈদেশিক সহায়তার ব্যবহার আরও দক্ষতার সাথে করতে হবে।

“আমাদের বর্তমান অর্থনীতির কাঠামোকে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন করে একটি উন্নততর কাঠামোতে যেতে হবে। এজন্য আমাদের শিল্পায়ন করতে হবে। কৃষিখাতেও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।”