তিনি বলেছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের আমলাতান্ত্রিক ‘ঝামেলা এড়িয়ে’ খুব সহজে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিতে শিগগিরই ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বুধবার মতিঝিলে বিডার কার্যালয়ে একটি জাপানি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার অনুমোদন দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীনে নবগঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ কার্যক্রম তুলে ধরেন নির্বাহী চেয়ারম্যান।
এ দিন জাপানি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটকে ‘আবেদনের কয়েক মিনিটের মধ্যে’ ব্যবসার যাবতীয় অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বিডা কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৪০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের।
গত সেপ্টেম্বরে বিডার কার্যক্রম শুরুর পর নভেম্বরে প্রথম বোর্ড মিটিংয়ের কথা তুলে ধরে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা আমাদের করনীয়গুলো ঠিক করেছি। বিডাকে একটি বিশ্ব মানের প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার জন্য যে ধরনের বিধি ও সাংগঠনিক কাঠামো দরকার, তা আমরা প্রণয়ন করেছি।”
এরইমধ্যে লোকবল কাঠামো তৈরি হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নিয়োগের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত করতে সব ধরনের বাধা দূর করার চেষ্টায় বিডার নেওয়া পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরেন বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক কাজী আমিন।
“বিনিয়োগকারীরা প্রথমেই দুই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। প্রথমটি হল- বিনিয়োগ করতে গিয়ে প্রচলিত আইন-কানুনগুলো ঠিকমতো বুঝতে সমস্যা। এই সেবাগুলো আমরা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে দেব।
“দ্বিতীয়ত, এ দেশে ব্যবসা করতে হলে একটি ফ্রেইমওয়ার্ক বা আইনি কাঠামোর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। সেই কাঠামোর কাজগুলো যত সহজ করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। কাঠামোগুলো যাতে ব্যবসাবান্ধব হয়। ‘ডুয়িং বিজনেসের’ যে ইনিশিয়েটিভ, সেটার মাধ্যমে ব্যবসা সহজতর করার কাজগুলো করা হচ্ছে।”
আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করা হবে জানিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আইন পাস হওয়ার আগেই দ্রুততর সেবা নিশ্চিত করার কাজটি তারা শুরু করেছেন।
“ওয়ান স্টপ সার্ভিস অ্যাক্ট কিছু দিনের মধ্যেই পার্লামেন্টে চলে যাবে। তার আগেই এই অ্যাক্টের মাধ্যমে যেভাবে আমরা সেবা দেব চিন্তা করেছি, প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে সেই সেবার কাজ শুরু করেছি।”
বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ডিজিটালাইজেশন নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার মাধ্যমে পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে চান তিনি।
“তাতে বিনিয়োগকারীদের সেবার জন্য আর আমাদের কাছে আসতে হবে না। ওয়েব সাইটে একটি পূর্ণাঙ্গ আবেদন ফরম পূরণ করে সে নতুন বিনিয়োগের অনুমোদন চাইবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চলে যাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে। ফলে অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত হবেন বিনিয়োগকারীরা।”
উদাহরণ হিসেবে কাজী আমিন বলেন, জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট এদিন ‘কয়েক মিনিটের মধ্যে’ যে অনুমোদন পেয়েছে, তা পেতে আগে ‘অনেক সময়’ লেগে যেত।
জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিউটের চেয়ারম্যান শোয়েচি কোবাইশি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাদের কোম্পানি কর্মসংস্থান সৃষ্টি বিষয়ক পরামর্শ সেবা (কনসালটেন্সি) দেয়।
“বাংলাদেশে একশ ইকোনমিক জোন, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা স্থাপনের প্রেক্ষাপটে আমরা এ দেশে এসেছি। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রায় এক কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।”
বাংলাদেশে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন দুই প্রতিষ্ঠান বিডা ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজার প্রশংসা করেন শোয়েচি কোবাইশি।
“আমি মনে করি বিডা ও বেজা বিনিয়োগের জন্য অনেক বড় কিছু করছে। তারা বাংলাদেশে পদ্ধতিগত পরিবর্তন নিয়ে আসছে।”