শুক্রবার ঢাকায় শিশু একাডেমীতে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিদ্যুত খাতে গ্যাসের প্রাইসটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুতের দামও আমরা অ্যাডজাস্ট করতে চাই।”
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানোর কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ভবিষ্যতে সারা বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ করার লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সুতরাং আমাদের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করার মানসিকাতও থাকতে হবে।”
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বৃহস্পতিবার বিভিন্ন খাতে গ্যাসের দাম মার্চ ও জুনে দুই ধাপে গড়ে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। কিন্তু তাতে আবাসিক গ্রাহকদের রান্নায় ব্যবহৃত গ্যাস ও বাণিজ্যক সংযোগে দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সমিতির (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, বিইআরসির গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তারা।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে রপ্তানি খাতও চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে ৩০-৩৫ লাখ গ্রাহক পাইপ লাইনে গ্যাস পায়, বাকি কোটি কোটি লোকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব হল সারা বাংলাদেশে আবাসিক খাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি দেওয়া, আমরা সেদিকেই যাচ্ছি।”
সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে পাইপলাইনে গ্যাস ব্যবহার থেকে সরে আসতে চাই, এলপিজির ব্যবহার বাড়াতে চাই এবং এলপিজির দাম সহনীয় রাখতে চাই।”
এর আগে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়িয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। তখন বিদ্যুতের দামও ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়ানো হয়।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ‘প্রয়োজন ছিল’ মন্তব্য করে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কিছু কিছু জায়গায় ভবিষ্যতে যে আমাদের এলএনজি আসবে সে প্রাইসের সাথে একটি সামঞ্জস্য তৈরি করতে হবে। এক বছর ধরে প্রস্তাব করছিলাম যে গ্যাস ও বিদ্যুতের দামে অ্যাডজাস্ট করা দরকার। সামান্য হলেও এর দরকার ছিল আমি মনে করি।’’
তার দাবি, গ্যাসের দাম ‘খুব বেশি বাড়েনি’।
“অতি সামান্য এটা। প্রথমে সাড়ে ৭ পারসেন্ট এবং পরবর্তীতে সাড়ে ৭ পারসেন্ট। ১৫-১৬% এর বেশি হবে না দুই ধাপে।’’
আরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা যৌক্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে রেখে আরও বেশি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম বিইআরসিকে। তারা এখনকার ইকোনমিক ভায়াবিলিটি দেখে, মানুষের আয়ের বৃদ্ধি অনুযায়ী এই সিদ্ধান্তে এসেছে।”
অর্থনীতিতে এই দাম বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পরবে বলে মনে করেন কিনা- এ প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, “আমার মনে হয় এটি কোনোরকম বিরূপ প্রভাব ফেলবে না, সহনীয় পর্যায়েই থাকবে।”
বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ সংকট থেকে বের হওয়ার উপায় হল- আপনারা পাইপ লাইন থেকে এলপিজিতে চলে যান।”
আগামীতে যানবাহন চালনার জন্য তরল গ্যাসসহ নতুন ধরনের ফুয়েল আমদানির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আগামীতে পরিবেশ বান্ধব ‘ইলেক্ট্রিক’ গাড়িও চলবে, সেজন্য প্রস্তুত হতে হবে।