বৃহস্পতিবার ‘ইয়ং বাংলা’র ফেইসবুক পেইজে সরাসরি সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম দাম কমাতে। কিন্তু সরকার মনে করছে, এই মুহূর্তে বিশ্বে তেলের দাম যেহেতু বেড়ে গেছে। তাই এই মুহূর্তে কমাচ্ছি না। তবে ভবিষ্যতে আশা রাখি কমবে।”
২০১২ সালে যে তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ১০৫ ডলার, দফায় দফায় কমে এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে তা ৩৩ ডলারে নেমে আসে।
তেলের দাম যে পরিমাণ কমেছে, তাতে যানবাহনের ভাড়ায় তেমন কোনো পরিবর্তন না আসায় আরও কমানোর দাবি ছিল ভোক্তাদের। বছরের শেষ দিকে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাদের আশার কথা শোনান।
গত ২৮ ডিসেম্বর মুহিত বলেন, জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে এবং তা জানুয়ারিতেই কার্যকর করা হতে পারে।
অর্থমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, আগের বার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দর ৮০ ডলার ধরে দেশের বাজারে তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। নতুন করে নির্ধারণ করতে হলে তা ৬০ ডলারের কাছাকাছি হবে।
তবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ১৮ জানুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, এক বছরের মাথায় তেলের দাম আরেক দফা কমানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েও বিশ্ব বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার আপাতত দাম পুনর্নির্ধারণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তেল রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক গতবছরের শেষ দিকে বাজারে দরপতন ঠেকাতে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম খানিকটা বাড়লেও এখনও ৬০ ডলারের নিচে ঘোরাফেরা করছে।
বিশ্ব বাজারের তুলনায় দেশে তেলের দাম বেশি থাকায় যেসব ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা করছেন তাদের লাভের অর্ধেক সরকারি কোষাগারে আনার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
বাংলাদেশে জ্বালানি তেল আমদানির অধিকাংশই হয়ে থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপিসির মাধ্যমে। এর বাইরে সামিট গ্রুপসহ কয়েকটি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি জ্বালানি আমদানি করে থাকে।
সিলিন্ডারের গ্যাসের দাম নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ভবিষ্যতে হয়ত কমে আসবে। কয়েকমাসের মধ্যে আমরা নীতি তৈরি করতে যাচ্ছি।”
ফেইসবুক লাইভে সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়েও প্রশ্নের জবাব দেন বিপু।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার কি এত বড় ঝুঁকি নেবেন যেখানে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে? অবশ্যই নেবেন না।
“আপনাদের চিন্তা করতে হবে কী ধরনের প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করছি। বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করছি।”
রামপালেই কেন করা হচ্ছে-এ প্রশ্নের উত্তরে নসরুল হামিদ সমুদ্র থেকে সহজে নদী চ্যানেল দিয়ে কয়লা আনার সুবিধার কথা বলেন।
“অনেকেই বলে সুন্দরবনে কেন? আসলে সুন্দরবনে তো রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে না, হচ্ছে রামপালে। সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। হেরিটেজ অঞ্চল থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে।”
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা গজারিয়াতে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। তাহলে কি অ্যাক্টিভিস্টদের কথা শুনে আমরা মনে করব যে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে আমাদের ঢাকা শহর ধ্বংস হয়ে যাবে?”
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার ব্যবহার শুরু করা হয়েছে।
“আমাদের লক্ষ্য, আগামী তিন বছরের মধ্যে দুই কোটি মিটার লাগাতে পারলে আমাদের মিটার রিডাররা যে ধরনের দুর্নীতি করে সেটা থাকবে না।”
সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে নানা কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন তিনি।
“সৌর থেকে কিন্তু কখনোই আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাব না। কারণ আমাদের এখানে তাপ অনেক কম। খরচ অনেক বেশি। তাই সোলার কখনো বেসলোড বিদ্যুতের (অনেক বিদ্যুতের) উৎস হবে না।”