জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, এক বছরের মাথায় তেলের দাম আরেক দফা কমানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েও বিশ্ব বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার আপাতত দাম পুনর্নির্ধারণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু বিকালে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রথমে বলেন, “আই অ্যাম নট শিওর অ্যাবাউট ইট।”
তেলের দাম নিয়ে সরকার তাহলে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এ প্রশ্নে মুহিত বলেন, “হয়নি ফাইনাল কিছুই। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
বিশ্ববাজারে দুই বছর ধরে তেলের দরপতন চললেও ভর্তুকির লোকসান থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে তুলতে দীর্ঘদিন দাম অপরিবর্তিত রাখে সরকার।
২০১২ সালে যে তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ১০৫ ডলার, দফায় দফায় কমে এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে তা ৩৩ ডলারে নেমে আসে।
এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলের দাবির মধ্যে ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪ শতাংশ এবং অকটেন ও পেট্রোলের দাম ১০ শতাংশের মতো কমানো হয়। তার কয়েকদিন আগে ফার্নেস অয়েলের দাম প্রতি লিটার ৬০ টাকা থেকে ৪২ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
তেলের দাম যে পরিমাণ কমেছে, তাতে যানবাহনের ভাড়ায় তেমন কোনো পরিবর্তন না আসায় আরও কমানোর দাবি ছিল ভোক্তাদের। বছরের শেষ দিকে এসে অর্থমন্ত্রী মুহিত তাদের আশার কথা শোনান।
গত ২৮ ডিসেম্বর মুহিত বলেন, জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে এবং তা জানুয়ারিতেই কার্যকর করা হতে পারে।
অর্থমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, আগের বার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দর ৮০ ডলার ধরে দেশের বাজারে তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। নতুন করে নির্ধারণ করতে হলে তা ৬০ ডলারের কাছাকাছি হবে।
“৪০ এ নেমেছিল, এখন আবার উপরে উঠছে। আমার হিসাবে বেস্ট প্রাইস ৬০ এর কাছাকাছি হবে, এটা খুব এমন বড় কিছু না,” বলেছিলেন মুহিত।
তেল রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক গতবছরের শেষ দিকে বাজারে দরপতন ঠেকাতে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম খানিকটা বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ ডলারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে গত কিছুদিন।
এই দাম মুহিতের হিসাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও সরকার এই মুহূর্তে তেলের দাম কমানো নিরাপদ বলে মনে করছে না বলে সাংবাদিকদের জানান জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ডিজেল ও ফার্নেস ওয়েল থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন এখন কত লাভ করে- এমন প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, ডিজেলে লাভ বেশি থাকে না। আর দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কৃষক পর্যায়ে ডিজেলের ভর্তুকিও চালিয়ে যেতে হবে।
নসরুল হামিদ বলেন, “আমরা মেইন যে তেলটা আনি সেটা জেট ফুয়েল। এই যা তেলের খরচ আমাদের। জেট ফুয়েলে কিছুটা লাভ করি, ডিজেলে অতি সামান্য। কনজাম্পশনের কারণে টোটাল আকারটা বড়। এছাড়া তো তেল আমরা আনি না। পেট্রোল আর অকটেন এখন আমার নিজেরা দেশেই উৎপাদন করি।”