তেলের দাম কমছে না

জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েও বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি দেখে পিছু হঠেছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2017, 10:57 AM
Updated : 18 Jan 2017, 11:33 AM

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ‍বিপু বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আপাতত দেশে তেলের দাম কমছে না।

“জ্বালানি তেলের দাম দুই ধাপে কমানোর কথা ছিল, সরকারের কাছে আমরা অনুমতির জন্য প্রস্তাবও পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে গেছে। বিশ্ব ব্যাংক আভাস দিয়েছে, আগামী বছরও তেলের দাম বাড়তে পারে। এ কারণে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ মুহূর্তে কোনো প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টে না যাওয়ার।”

বিশ্ববাজারে দুই বছর ধরে তেলের দরপতন চললেও ভর্তুকির লোকসান থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে তুলতে দীর্ঘদিন দাম অপরিবর্তিত রাখে সরকার।

২০১২ সালে যে তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ১০৫ ডলার, দফায় দফায় কমে এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে তা ৩৩ ডলারে নেমে আসে।

এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলের দাবির মধ‌্যে ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪ শতাংশ এবং অকটেন ও পেট্রোলের দাম ১০ শতাংশের মতো কমানো হয়। তার কয়েকদিন আগে ফার্নেস অয়েলের দাম প্রতি লিটার ৬০ টাকা থেকে ৪২ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

তেলের দাম যে পরিমাণ কমেছে, তাতে যানবাহনের ভাড়ায় তেমন কোনো পরিবর্তন না আসায় আরও কমানোর দাবি ছিল ভোক্তাদের। বছরের শেষ দিকে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাদের আশার কথা শোনান।  

গত ২৮ ডিসেম্বর মুহিত বলেন, জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে এবং তা জানুয়ারিতেই কার্যকর করা হতে পারে।

অর্থমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, আগের বার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দর ৮০ ডলার ধরে দেশের বাজারে তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। নতুন করে নির্ধারণ করতে হলে তা ৬০ ডলারের কাছাকাছি হবে।

“৪০ এ নেমেছিল, এখন আবার উপরে উঠছে। আমার হিসাবে বেস্ট প্রাইস ৬০ এর কাছাকাছি হবে, এটা খুব এমন বড় কিছু না,” বলেছিলেন মুহিত।

তেল রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক গতবছরের শেষ দিকে বাজারে দরপতন ঠেকাতে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ব‌্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম খানিকটা বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ ডলারের মধ‌্যে ঘোরাফেরা করছে গত কিছুদিন।   

এই দাম মুহিতের হিসাবের সঙ্গে সামঞ্জস‌্যপূর্ণ হলেও সরকার এই মুহূর্তে তেলের দাম কমানো নিরাপদ বলে মনে করছে না বলে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর ভাষ‌্য।

ডিজেল ও ফার্নেস ওয়েল থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন এখন কত লাভ করে- এমন প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, “ডিজেলে খুব কম, ডিজেলে খুব বেশি মার্জিন থাকে না। যেহেতু এখানে সরকার ভর্তুকি দেয় যখন কৃষক পর্যায়ে যায়... এ ভর্তুকিটা আরও বেশ কিছু বছর রাখতে হবে। আমাদের পোভার্টি লেভেল যদি শেষ না হয়, ততদিন ডিজেলে এটা রাখতে হবে।

“আমরা মেইন যে তেলটা আনি সেটা জেট ফুয়েল। এই যা তেলের খরচ আমাদের। জেট ফুয়েলে কিছুটা লাভ করি, ডিজেলে অতি সামান্য। কনজাম্পশনের কারণে টোটাল আকারটা বড়। এছাড়া তো তেল আমরা আনি না। পেট্রোল আর অকটেন এখন আমার নিজেরা দেশেই উৎপাদন করি।”

তেলে আগে ভর্তুকি দিলেও এখন লাভ করছে সরকার। অথচ দাম না কমানোর যুক্তিতে এর আগে বলা হয়েছে, আগের ভর্তুকি ফেরত নিতেই এ ব‌্যবস্থা।  

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নসরুল হামিদ বলেন, “এ প্রশ্নটা আমারও, আমরা ভর্তুকি দিলে তা আবার ফেরত নেওয়ার দরকার কি? আমার মনে হয় এ প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

“প্রতি বছর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলছি, যেহেতু এটা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে এটা অ্যাবসলিউট করার জন্য। এবারও বাজেটে এটা আমরা চাইব।”