রেমিটেন্স কমেনি, দাবি পরিকল্পনামন্ত্রীর

কেন্দ্রীয় ব‌্যাংকের পরিসংখ‌্যান প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার কথা বললেও উল্টো বলছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার দাবি, রেমিটেন্স কমেনি, বরং তা আসছে ভিন্নভাবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2017, 03:19 PM
Updated : 22 April 2019, 02:25 PM

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে।

রেমিটেন্স কমে যাওয়া নিয়ে অর্থনীতিবিদরাও উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, মন্দার কারণে প্রবাসীদের আয় কমে যাওয়া এর অন‌্যতম কারণ। এর সঙ্গে হুন্ডিকে দায়ী করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

পরিকল্পনামন্ত্রী রোববার শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘অর্থনীতির হালচাল’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রেমিটেন্স প্রসঙ্গ বলে বিপরীত মত প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের পাল্টায় তিনি বলেন, “আপনারা কি বিশ্বাস করেন আমাদের রেমিটেন্স ফল করেছে। এমন কোনো কারণ থাকতে পারে যে রেমিটেন্স ফল করতে পারে…

“রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে। রেমিটেন্স কমছে না। আমাদের জনশক্তি রপ্তানি বাড়ছে। তাহলে রেমিটেন্স কমবে কেন?”

“রেমিটেন্সটা অন্য চ্যানেলে আসে। প্রপার চ্যানেলে না এসে অন্য চ্যানেলে আসে। হুন্ডির মাধ্যমে আসে। এর কারণ আমি পরে বলব, এখানে বলা যাবে না,” বলেন তিনি।

রেমিটেন্স অর্থ হিসেবে না এসে পণ্য হয়ে আসছে দাবি করেন মুস্তফা কামাল। তবে পণ‌্য হিসেবে আসা ওই রেমিটেন্স যে দেশে থাকছে না, তার ইঙ্গিতও মেলে তার কথায়।   

“আমাদের লোকজন সরাসরি টাকা না এনে গোল্ড (স্বর্ণ) নিয়ে আসছেন। এসব গোল্ড চলে যাচ্ছে ইন্ডিয়াতে।”

চলতি অর্থবছরে (জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ হবে বলে আবারও আশাবাদ প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

“জিডিপি প্রবৃদ্ধি মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের উপরই নির্ভর করে। চলতি অর্থবছরে এই তিন খাতেই ভালো প্রবৃদ্ধি হবে। তাই আমরা এবার প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করছি।”

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ ভাগ হবে।

লক্ষ্যমাত্রারও বেশি প্রবৃদ্ধির আশা কেন করছেন- প্রশ্নে মুস্তফা কামাল বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক একটু কনজারভেটিভ। প্রত্যেক বছরই দেখা গেছে, তারা যা পূর্বাভাস দেয়, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

“তারা (বিশ্ব ব্যাংক) সবসময় ভাবে বাংলাদেশের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। দেশটা ছোট, পাশে সমুদ্র। কিন্তু ২০৩৫ সালের পর আমাদের এক পাশে পৃথিবীর এক নম্বর অর্থনীতির দেশ, আর অন্যপাশে দুই নম্বর দেশ, এটা তারা লক্ষ্য করে না।”

বাংলাদেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৩ দশমিক ২ শতাংশ জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মাধ্যমে দেশে একটি শক্তিশালী ‘মিডল ক্লাস’ তৈরিকে অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ধরা হয়েছে। তাই এখন একনেকের প্রায় প্রতিটি বৈঠকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধনমূলক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

অর্থনীতির উন্নয়নে পোশাক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক গবেষণা আরও বাড়াতে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএসকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

এবছর দেশের শ্রম বাজারে নতুন করে প্রায় ২০ লাখ লোক যুক্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।