হুন্ডি নিয়ে তদন্তের দাবি সিপিডির

গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়েনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2017, 04:24 PM
Updated : 7 Jan 2017, 04:24 PM

এক্ষেত্রে হুন্ডির মাধ‌্যমে অবৈধ চ‌্যানেলে দেশে টাকা আসার শঙ্কা প্রকাশ করে সে বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে তারা। এই প্রক্রিয়ায় বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে বলেও সন্দেহের কথা বলেছে সংস্থাটি।

শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা-২০১৭’র ষান্মাসিক প্রতিবেদন তুলে ধরে এসব বলেন সংস্থাটির কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম খান।

রেমিটেন্স ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে। সেখানে রেমিট্এস প্রবাহ বাড়ছে না কেন?  

“আমাদের দুটো হাইপোথিসিস আছে। হয়তো রেমিটেন্স আসছে, কিন্তু সেটা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে না, হুন্ডির মাধ্যমে হয়তো আসছে। সার্বিকভাবে আমাদের বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পরিস্থিতি ভালো না।”

সিপিডির ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা-২০১৭’র সমন্বয়ক তৌফিকুল বলেন, “মোবাইল ব্যাংকিংকে কাজে লাগিয়ে হুন্ডি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। রিয়েল টাইমে তারা এটা পাঠাচ্ছে। সিঙ্গাপুরে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা স্ক্র্যাচ কার্ড ব্যবহার করছে। সেই কার্ড কিনে সেই টাকা যে কাউকে পাঠিয়ে দিতে পারেন। বাংলাদেশের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কেউ কেউ এখানে জড়িত বলেও বলা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।”

অর্থপাচারও রেমিটেন্স প্রবাহের সঙ্গে সম্পর্কিত মন্তব‌্য করে তিনি বলেন, “টাকা অবৈধ পথে আসছে, সেই সমপরিমাণ অর্থ কিন্তু এখান থেকে বেরিয়েও যাচ্ছে। ফলে সেই অর্থে হুন্ডি আসার সাথে সাথে পাচার বাড়ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।”

‘সামগ্রিক অর্থনীতি স্থিতিশীল’

২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে মত এসেছে সিপিডি থেকে।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, “এই অর্থবছরে অনেকগুলো জায়গায় আমরা ইতিবাচক প্রবণতা দেখেছি। একদিকে যেমন আমাদের প্রবৃদ্ধি এবং ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ দিয়ে ২০১৭ সাল শুরু করেছি, সেই সঙ্গে সামগ্রিক অর্থনীতি এক ধরনের স্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে আছে।

“অনেকগুলো শক্তিশালী অবস্থানে থাকা জায়গাতে বেশ কিছু দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। তার একটি হলো রপ্তানি। গত অর্থবছরে যে শক্তিশালী রপ্তানি পরিস্থিতি ছিল, সেই জায়গাতে আমাদের একটা দুর্বলতা চলে আসছে।”

রপ্তানিকে কেন্দ্র করেই প্রবৃদ্ধিতে বড় উল্লম্ফন হওয়ার কথা তুলে ধরে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, “একইসঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগে কিছু কিছু মিশ্র সিগনাল আমরা পাচ্ছি। নেতিবাচক জায়গার ক্ষেত্রে ব্যাংক ও রেমিটেন্সের জায়গাকে বড় আকারে আমরা দেখছি।

“সার্বিক পরিস্থিতিতে আমরা বলছি, বাজেট বাস্তবায়নে বড় আকারে সংশোধনের দরকার হবে।”

সিপিডির পক্ষে তৌফিকুল বলেন, “মধ্য মেয়াদে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করার দুর্বলতা আমাদের ম্যাক্রো-ইকোনোমিক ব্যবস্থাপনাকে চিন্তার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। অনেকগুলো সংস্কার কর্মসূচি সরকারের নীতি ও পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, কিন্তু সেটার সময়মতো বাস্তবায়ন আমরা দেখছি না।

“ব্যাংকিং কমিশনের কথা খুব জোর দিয়ে বলছি। কারণ এটা দিন দিন দুর্বলতম জায়গায় যাচ্ছে।”

এ প্রসঙ্গে সিপিডির ‘সম্মানিত ফেলো’ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “এটা কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন বা তথ্য কমিশনের মতো স্থায়ী কমিশন না। এটা স্বল্প সময়ের জন্য। অনেকেই ভুল বোঝে।”

প্রবাসী নীতি সম্পর্কে তৌফিকুল বলেন, “আমাদের প্রবাসী কর্মসংস্থানের তথ্য আমরা জানি যে, আমাদের কত লোক বাইরে যাচ্ছে। কিন্তু কত লোক ফেরত আসছে, বা কত লোক এখন বিদেশে আছে- সেই তথ্য আমরা জানি না। এই তথ্য না থাকলে আমরা সঠিকভাবে নীতি নিতে পারব না।”

‘সুদের চাপ বাড়ছে’

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০-১৫ বছর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে গেছে। এখন মোট ঋণের দুই তৃতীয়াংশ এ ধরনের।

“গত বছর দেখিয়েছি, মোট বাজেট ঘাটতির ৯০ শতাংশ দেশীয় উৎস থেকে নিয়ে করেছি। যখন আমরা দেশীয় উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছি, তখন সুদের হারের চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

“রাজস্ব ব্যয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ২৫ শতাংশ ঋণের পরিসেবা ব্যয়ে যাচ্ছে। একইসাথে আমরা কিছু নতুন ধরনের উন্নয়নে যাচ্ছি। বিদেশে আমরা নতুন ধরনের কিছু নিচ্ছি, যেগুলো আগে নিতাম না। চীন, রাশিয়া বা ভারতের কাছ থেকে এমন ঋণ নিচ্ছি।

“সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। মধ্য আয়ের দেশ হলে স্বল্প সুদে অনেক জায়গা থেকে ঋণ নেয়ার সুযোগ কমে যাবে।”

তবে ঋণের স্থিতি ২০২০ সাল পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়বে না বলে মন্তব্য করেন প্রতিবেদন উপস্থাপক তৌফিকুল।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ইশতিয়াক বারী, জিশান আশরাফ, নওশিবা অর্নব ও সিলভিয়া জামান উপস্থিত ছিলেন।