প্যাকেটজাত খাদ্যের বাজার আর পোশাক শিল্পের পরিসর বাড়ায় শর্করার জন্য ব্যবসায়ীরাও এই কাসাভা চাষে উৎসাহ যোগাচ্ছেন।
গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, ক্র্যাকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাঁপড়, চিপসসহ শুকনো প্যাকেটজাত খাবারের অন্যতম উপাদান শর্করা বা স্টার্চ মেলে কাসাভা মাড়াই করে।
কাসাভা থেকে উৎপন্ন মিহিদানা কাপড়ের মান বাড়াতে ভূমিকা রাখায় পোশাক ব্যবসায়ীদের কাছেও এর কদর আছে।
দেশে-বিদেশে চাহিদার সঙ্গে দাম বাড়তে থাকায় গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের অনেক জমিতেই এখন দেখা মিলবে কাসাভার।
মৌসুমের এ সময়ে চলছে কাসাভা সংগ্রহের কাজ, প্রক্রিয়া শেষে যেগুলো চলে যাবে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানার প্রতিনিধিদের কাছে।
চাষিরা জানান, সেচ কিংবা অন্যান্য সমস্যার কারণে যেসব জমিতে কোনো ফসলই ভালো হয় না, সেগুলোতে কাসাভার চাষ করে লাভবান হওয়ায় এ শস্য চাষে তারা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
২২ বছর ধরে কাসাভা চাষ করে আসা টাঙ্গাইলের এ কৃষক এবার ৯৫ একর জমি থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লাভ তোলার আশা করছেন।
“এক সময় ৫৬ টাকায়ও মণ বিক্রি করেছি। দুই বছর আগেও রহমান এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে প্রতিমণ আড়াইশ টাকায় বিক্রি করছি। এখন প্রাণ এগ্রো কাসাভার দাম ২৮০ টাকা ঠিক করছে,” বলেন তিনি।
একই এলাকার হামিদ, সেলিম, রানাও কয়েক বছর ধরে তাদের জমিতে কাসাভা চাষ করে আসছেন। কেউ কেউ কাসাভার সঙ্গে আবাদ করেছেন আনারস, কলাসহ বিভিন্ন ফল ও রবিশস্য।
প্রাণ এগ্রো বিজনেস লিমিটেডের চিফ অপারেটিভ অফিসার মাহতাব উদ্দিন জানান, মৌসুমের শুরুতে তারা তালিকাভুক্ত কৃষকদের বিনাসুদে একরপ্রতি ১৭ হাজার টাকা করে ঋণ দিয়েছেন। পাশাপাশি চাষের প্রশিক্ষণ, কৃষি উপকরণ সহায়তা ও স্বল্পমূল্যে বীজও দেয়া হচ্ছে।
“কাসাভার ফল পেতে ১১ মাস অপেক্ষা করতে হয়। ভবিষ্যতে বছরে দুইবার এই ফসল উৎপাদন করা যায় কিনা সেই গবেষণা চালাচ্ছে প্রাণ। পাশাপাশি কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকাকেও কাসাভা চাষের আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
এ কোম্পানির টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ এলাকার অপারেশনাল ম্যানেজার এএইচএম কবির জানান, খরাসহিষ্ণু ও রোগ-বালাই কম হওয়ায় এ ফসলে ঝুঁকি কম। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত এবং শর্করা সমৃদ্ধ ফসল কাসাভা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও ভাল জন্মে।
প্রাণের চিফ অপারেটিভ অফিসার মাহতাব জানান, এবছর তারা হবিগঞ্জের প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কাসাভা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট স্থাপন করেছেন, যেখান বছরপ্রতি ৬০ হাজার টন কাসাভা প্রক্রিয়াজাত করা যাবে।
“যদিও এ বছর ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টন কাসাভা মাড়াইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।”
এ মৌসুমে পাঁচ হাজার কৃষক তিন হাজার ৭০০ একর পাহাড়ী ও সমতল জমিতে কাসাভার চাষ করলেও আগামী মৌসুম মোট ১০ হাজার একর জমিতে এ চাষ হবে বলে জানান তিনি।
বিদেশ নির্ভরতা কমাতে কোম্পানিগুলো কৃষকদের কাসাভা চাষে আগ্রহী করতে ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন প্রাণ এগ্রোর ফ্যাক্টরি শাখার ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও পোশাক শিল্প সাধারণত বিদেশ থেকে আমদানি করা স্টার্চ ও গ্লুকোজের উপর নির্ভরশীল ছিল।
প্রতিমাসে কেবল প্রাণের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানেই লাগে ১২শ’ টন স্টার্চ। এর অর্ধেকটা নিজস্ব কারখানা থেকে, বাকিটা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে অন্যান্য কোম্পানির কাছে খোলা বাজারে বিক্রির জন্যও থাইল্যান্ড, ভারত, চীন, ভিয়েতনাম থেকে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে স্টার্চ আমদানি করে প্রাণ।
প্রতিদিন সাড়ে তিনশ’ টন করে প্রাণ এবছর ২০-২২ হাজার টন কাসাভা মাড়াবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
মাড়াইয়ের সময় ৫০ শতাংশ পানি বেরিয়ে যায়। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ স্টার্চ ও গ্লুকোজ পাওয়া যায়। বাকি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ছোবড়া দিয়ে জৈব সার উৎপাদিত হয়।
“দেশে বাণিজ্যিকভাবে কাসাভা চাষের ফলে গ্লুকোজ ও স্টার্চের উপর বিদেশ নির্ভরতা কমছে,” বলেন আসাদ।