সঞ্চয়পত্রে ঋণ: ৫ মাসেই ছাড়িয়েছে বছরের লক্ষ্য

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে বেশি নিয়ে ফেলেছে পাঁচ মাসেই।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2016, 04:16 AM
Updated : 30 Dec 2016, 04:31 AM

সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই সরকারকে এই ঋণ বহন করতে হচ্ছে; গুনতে হচ্ছে সুদ। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন অর্থনীতির একজন গবেষক। 

সরকার চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১২ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল। কিন্তু জুলাই-নভেম্বর সময়েই ২০ হাজার ৩১৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার তথ্য দিয়েছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল শোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কেবল নভেম্বর মাসেই ৪ হাজার ৪০৩ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, একক মাস হিসেবে যা রেকর্ড।

বিআইডিএস এর গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংকে আমানতের সুদের হার ক্রমাগত কমতে থাকায় সাধারণ মানুষ তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগের জন‌্য সঞ্চয়পত্র ছাড়া আর কোনো লাভজনক বিকল্প পাচ্ছে না।

“ফলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের ঋণের বোঝা আর সুদ বাড়ছে,… সরকারের রাজস্ব বাজেটের ওপর চাপ পড়ছে।”

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ের তুলনায় এবার সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত অর্থবছরের এই সময়ে ১১ হাজার ৩২৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।

বিনিয়োগে মন্দার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যাংকগুলোতে বিপুল অংকের অর্থ পড়ে আছে, যাকে ‘অলস অর্থ’ বলা হচ্ছে। ওই অর্থ খাটাতে না পেরে আমানতের সুদ হার কমিয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো।

ফাইল ছবি

স্থায়ী আমানতের বিপরীতে বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছে, যা সঞ্চয়পত্রের সুদের তুলনায় অনেক কম।

২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ গড়ে ২ শতাংশ হারে কমানোর পরও ১১ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যায়।

জায়েদ বখত মনে করছেন, সঞ্চয়পত্র থেকে বিপুল ঋণের চাপে সরকার বাজেট ব্যবস্থাপনায় যে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে, তা এড়ানোর পথ ‘একটাই’।

“সুদের হার কমাতে হবে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ‘পেনশন’ এবং মহিলাদের জন্য ‘পরিবার’ সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য সব সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দ্রুত কমাতে হবে,” বলেন তিনি।

অবশ‌্য গত অর্থবছরে সুদ হার কমিয়েও বিক্রির প্রবণতা সরকার কমাতে পারেনি। আগে পাঁচ বছর মেয়াদী এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলে মাসে এক হাজার ৭০ টাকা মুনাফা পাওয়া যেত। ২০১৫ সালের মে মাসে সুদ হার কমানোর পর পাওয়া যাচ্ছে ৯১২ টাকা। তারপরও সবচেয়ে ‘নিরাপদ’ এ খাতে বিনিয়োগ কমেনি; উল্টো বাড়ছে। অন্য সব সঞ্চয়পত্রের চিত্রও মোটামুটি এক।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। সুদের হার কমানোর পরও বিক্রি না কমায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়। অর্থবছর শেষে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ধার হয়েছে।