গ্রামীণ ব‌্যাংক ভবন ছেড়ে গুলশানে ভাড়া বাড়িতে ইউনূস

গ্রামীণ ব‌্যাংকের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের প্রায় ছয় বছর পর গ্রামীণ ব‌্যাংক ভবন ছেড়ে গুলশানের একটি ভাড়া বাড়িতে উঠেছেন মুহাম্মদ ইউনূস।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2016, 08:20 PM
Updated : 25 Dec 2016, 11:18 AM

ইউনূস তার ৩০ বছরের আবাস গত বুধবার ছেড়ে যান বলে এক ফেইসবুক স্ট‌্যাটাসে জানিয়েছেন ইউনূস সেন্টারের মহাব‌্যবস্থাপক এম এফ এম আমির খসরু।

ইউনূসের ভবন ছেড়ে যাওয়ার সময়ের কয়েকটি ছবিও পোস্ট করেন তিনি।

মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়েও হেরে যান তিনি।

তারপর থেকে সরকারের সঙ্গে নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশির সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। পাল্টাপাল্টি বক্তব‌্যও এসেছে বিভিন্ন সময়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ‌্যালয়ের অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক ইউনূস গত শতকের ৮০ এর দশকে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গ্রামীণ ব‌্যাংকের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। এই দায়িত্ব পালনের মধ‌্যেই ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান তিনি।

অপসারণের পরও ইউনূসের কারণেই গ্রামীণ ব‌্যাংকের বিষয়ে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছিল না বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অভিযোগ করে আসছিলেন। এই ব‌্যাংকটির ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিকনা সরকারের হাতে।

ঢাকার মিরপুর-২ নম্বরে বহুতল গ্রামীণ ব‌্যাংক ভবনে ব‌্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। গ্রামীণ ব‌্যাংক ভবন কমপ্লেক্সের মধ্যেই পাঁচ তলা করে আরও তিনটি ভবন আছে, যার একটি আবাসিক।

ওই আবাসিক ভবনের নিচ তলায় স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ইউনূস। তার ব‌্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ইউনূস সেন্টারের কার্যালয়ও গ্রামীণ ব‌্যাংক ভবনে।

আমির খসরু ফেইসবুকে লিখেছেন, “গত ৩০ বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংক কমপ্লেক্সে বাস করেছেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি গ্রামীণ ব্যাংককে নিজের সন্তানের মতো গড়েছেন। এমনকি তিনি যখন দেশের বাইরে ছিলেন তখনও এখানে যেন তার উপস্থিতি অনুভব করা যেত।

“তিনি অনেক আগেই এখান থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও গ্রামীণ পরিবারের অনুরোধে পারেননি। কিন্তু আমরা আর তাকে ধরে রাখতে পারলাম না। আমাদের সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে তিনি আজ নতুন বাসায় চলে গেলেন।”

রোববার গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে গেলে সেখানকার কয়েকজন কর্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গ্রামীণ ব্যাংক ভবন ছেড়ে যান ইউনূস। ওই ভবন ছাড়ার সময় ছোট একটি অনুষ্ঠানে সবার উদ্দেশে বক্তব্যও দেন তিনি।

ইউনূস যে ভবনে থাকতেন তার বেশিরভাগ আবসবাবপত্র গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরবারহ করা জানিয়ে একজন কর্মচারী বলেন, “হাতেগোনা কিছু আসবাবপত্র স্যারের কেনা ছিল, চলে যাওয়ার সময় স্যার ওগুলো নিয়ে গেছেন।”

এই কর্মচারী বলেন, “স্যারকে এমডির পদ থেকে অপসারণের পর উনার মেয়ে ওই বাড়িতে আর থাকতে চাইতেন না। এখানে কোনো অসুবিধা না থাকলেও মেয়ের কারণেই স্যার গুলশানে বাসা ভাড়া নিয়েছেন।”

গ্রামীণ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা বুধবার ইউনূসকে গুলশানের বাড়িতে এগিয়ে দিয়ে এসেছেন। গুলশানের ১৬ তলা একটি ভবনের ১২ তলার ফ্ল‌্যাটে নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশি উঠেছেন বলে ওই কর্মচারী জানান।

রোববার বড়দিনের ছুটিতে গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের সব শাখা বন্ধ থাকায় মুহাম্মদ ইউনূস গুলশানের কোন বাড়িতে উঠছেন সে তথ্য কোনো কর্মচারীই জানাতে পারেননি।