সোমবার নয়া দিল্লিতে সরকারি আমন্ত্রণে ভারত সফররত একদল বাংলাদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপচারিতায় দেশটির বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওআরএফের ফেলো পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী এ পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “এখন সার্কের কথা ভুলে যান। বিমসটেকের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে আমি বাংলাদেশকে আহ্বান জানাই।
কাশ্মির নিয়ে পাক-ভারত উত্তেজনার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত ঘোষণার প্রেক্ষিতে ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার এ মত দেন।
হামলার পর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের এই ‘কঠিন সময়ে’ পাশে থাকার ঘোষণা দেন।
তবে প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের দূরে থাকা উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এই ভারতীয় কূটনীতিক।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে সার্ক সম্মেলনের পরিবেশ ‘নেই’ জানিয়ে গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দেয় ভারত।
আফগানিস্তান, ভুটান ও বাংলাদেশও ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।৮টি সদস্য দেশের চারটির আপত্তির মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত করা হয়।
সার্কের অগ্রগতিতে পাকিস্তানকে ‘প্রধান বাধা’ আখ্যা দিয়ে পিনাক রঞ্জন বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে পাকিস্তান অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আচরণও বদলায়নি দেশটি।
জোটভুক্ত দেশগুলোকে ‘বাস্তবানুগ’ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সামনের কয়েক বছর পাকিস্তানকে সার্কের বাইরে রাখতে হবে। তাহলেই একদিন দেশটি এই জোটের উপকারিতা বুঝবে।
“প্রতিটি দেশের একটি সেনাবাহিনী থাকে, আর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একটি দেশ আছে। তাদের সঙ্গে ভিন্ন উপায়ে কাজ করতে হবে।”
পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ভারত বিমসটেককে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
“আমাদের বিমসটেক ও বিবিআইএন নিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত”, বলেন পিনাক।
সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের আঞ্চলিক জোট
সার্কের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান এ জোটের সদস্য নয়। সার্কের বদলে বিমসটেককে শক্তিশালী করতে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপকে বিমসটেকের ‘পর্যবেক্ষক’ করার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান পিনাক।
মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাকায় বিমসটেক বাংলাদেশের জন্য ‘সহযোগিতার নতুন পথ’ খুলে দেবে বলেও সাবেক এ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন।
“চাইলে আমরা বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে দ্বিপাক্ষিক কিংবা ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতার চিন্তাও করতে পারি”, বলেন তিনি।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনের দিকে ইঙ্গিত করে পিনাক বলেন, “সম্পর্কের শুরুতে মিয়ানমারের আগ্রহ আছে এমন বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসা উচিত বাংলাদেশের।”
ভারতও একই প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে পরস্পরের প্রতি ‘আস্থা বাড়বে’।