বুধবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জাইকা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি সই হয়।
জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে অনুষ্ঠানে বলেন, টাকার অংকে বাংলাদেশের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় জাপানি ঋণ।
এই চুক্তি অনুযায়ী, জাপানের ৩৭তম লোন প্যাকেজের আওতায় ওই অর্থ পাবে বাংলাদেশ। ঋণের জন্য বার্ষিক সুদের হার হবে মাত্র ০.০১ শতাংশ।
ঋণ শোধ করতে হবে ৪০ বছরে। ঋণ চুক্তিতে রেয়াতকাল ধরা হয়েছে ১০ বছর; অর্থাৎ চুক্তির প্রথম দশ বছর পর থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। মেয়াদকাল প্রয়োজনে আরও ১০ বছর বাড়ানো যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। সে হিসাবে ৫০ বছরে এ ঋণ পরিশোধের সুযোগ থাকছে।
ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প, যমুনা রেলব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প, আন্তঃসীমান্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এনার্জি ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রোমোশন ফাইন্যান্সিং প্রজেক্ট, ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টে এই অর্থ ব্যয় হবে।
বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম এবং জাপানের পক্ষে জাইকার বাংলাদেশ প্রধান মিকিউ হাটায়েডা চুক্তিতে সই করেন।
এর আগে গত ডিসেম্বরে ৩৬তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে ছয় প্রকল্পে ৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা দিতে চুক্তি করে জাপান। সেটাই ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় জাপানি ঋণ।
অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, “আমাদের সরকার পশ্চিমা নীতি থেকে সরে প্রাচ্য নীতি গ্রহণ করে। তার ফল আজকের রেকর্ড জাপানি সহায়তা চুক্তি। আমরা শুধু পশ্চিম কিংবা প্রাচ্যে নয়, পৃথিবীর সব দিকেই তাকাচ্ছি। উত্তর দক্ষিণেও বন্ধু খুঁজছে সরকার।”
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘চেনা বাংলাদেশ অচেনা হয়ে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এ পরিবর্তন ইতিবাচক ও উন্নয়নের।”
জাপানি রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে এদেশের সঙ্গে জাপানের আবেগের সম্পর্ক রয়েছে। এদেশের উন্নয়নে জাপানের নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতার পাশাপাশি অনেক জাপানি ব্যবসায়ী ও গ্রুপকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। শিগগির এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হবে।”
দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কাছ থেকে ঋণ সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি এসেছিল সে চুক্তি তারই ফসল বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে জাইকার আবাসিক প্রতিনিধি মিকিও হাতায়েদা জানান, জাপান সরকার এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ঋণ হিসেবে ১ লাখ কোটি জাপানি ইয়েন, অনুদান হিসেবে ৬০ হাজার কোটি ইয়েন এবং কারিগরি সহায়তা হিসেবে ৬ হাজার ৫০০ কোটি ইয়েন দিয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম বলেন, “জাপান সরকার যেসব প্রকল্পে সহযোগিতা দিচ্ছে তার সবগুলোই মেগা প্রকল্প।
“এ প্রকল্পগুলো শেষ হলে বাংলাদেশ লক্ষ্য পূরণে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।”