অগ্রাধিকার তালিকায় এখন ১০ প্রকল্প

বর্তমানে ফার্স্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট নামে আটটি মেগা প্রকল্প রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ তালিকায় নতুন দুটি প্রকল্প বাড়িয়ে দশটি করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2016, 07:02 PM
Updated : 2 June 2016, 07:18 PM

নতুন প্রকল্প দুটি হচ্ছে ‘পদ্মা রেলসেতু সংযোগ’ এবং ‘কক্সবাজার-দোহাজারী-গুনদুম রেলপথ’ প্রকল্প।

চলমান মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এলএনজি টার্মিনাল।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর ও এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প ছাড়া সবকটিতেই বরাদ্দ রেখেছেন।  

পদ্মা বহুমুখী সেতু:
বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ বহুল প্রত্যাশিত এ প্রকল্পটির সর্বশেষ নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির ৩২ শতাংশ অগ্রগতি হয়। আগামী অর্থবছরে এর জন্য ৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পদ্মা রেলসেতু সংযোগ: দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। প্রকল্পটির জন্য ২ শতাংশ সুদে ২০ বছর মেয়াদে চীন থেকে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা রয়েছে।

১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-খুলনা পথে ২১২, ঢাকা-যশোর পথে ১৮৪ এবং ঢাকা-দর্শনা পথে দূরত্ব কমবে ৪৪ কিলোমিটার। প্রকল্পের জন্য নতুন বাজেটে ৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

দোহাজারি-রামু-কক্সবাজার গুনদুম রেলপথ: পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে গৃহীত প্রকল্পটির ব্যয় ১৮ হাজার ৩০৪ কোটি টাকায় উন্নীত করে সম্প্রতি সংশোধন করেছে সরকার। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রকল্পটির জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা দেওয়ার কথা। আগামী অর্থবছরে এর জন্য বরাদ্দ থাকছে ৬৩১ কোটি টাকা। দুই ধাপে ১২৯ দশমিক ৫৮৩ কিলোমিটার রেলপথ হওয়ার কথা এ প্রকল্পে।

ঢাকার মেট্রোরেল হবে এমন, যা দেখিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ

মেট্রোরেল:
মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা আছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পে ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ও জাপান ১৬ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা যোগান দেবে। ২০২৪ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। আগামী অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য ২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পায়রা সমুদ্রবন্দর: দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের অনগ্রসরতা, আমদানি বৃদ্ধি এবং বন্দরের ভবিষ্যৎ ধারণ ক্ষমতা বিবেচনায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। দেশের তৃতীয় এ বন্দর নির্মাণে ২০১৩ সালের নভেম্বরে জাতীয় সংসদে ‘পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন’ নামের একটি আইন পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ড্রেজিং কার্যক্রমে যন্ত্রপাতি কেনা নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পাবনার ঈশ্বরদীতে ৫ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা। প্রকল্পে সরকার ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয় করবে। রাশিয়ার প্রকল্প সাহায্য রয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা। আগামী বাজেটে প্রকল্পের জন্য ৬১৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ৬০০ মেগাওয়াট করে দুটি কেন্দ্রের মাধ্য মোট ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এ প্রকল্প নেওয়া। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে জাপান দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালে। ১৪ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ইউনিটের মাধ্যমে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা এই প্রকল্পে। নতুন অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য ২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর: দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে। বন্দরটি হলে তা প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য ব্যবহার করতে পারবে। সরকার মনে করে, বন্দরটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি কেন্দ্রে পরিণত হবে।

প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য নীতিগত অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে জি টু জি ভিত্তিতে এ বন্দর নির্মাণে চীন, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও দুবাইয়ের চারটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করেছে।

মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ১০ সদস্যের একটি কমিটিতে প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে আগামী বাজেটে প্রকল্পটির জন্য কোনো বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়নি।

এলএনজি টার্মিনাল: সাংগু গ্যাস ক্ষেত্র শেষ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সংকট বিরাজ করছে। এ সংকট নিরসনে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির লক্ষ্যে মহেশখালী উপকূলে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টার্মিনাল হবে। টার্মিনাল থেকে মূল ভূখণ্ডে গ্যাস আনতে ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। ২০১৭ সালে প্রকল্পটি শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির জন্য আগামী অর্থবছরে কোনো বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়নি।