কৃষিতে একই প্রণোদনা, চাল আমদানিতে শুল্ক বাড়ছে

কৃষককে ধানের ন্যায্য মূল্য দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন অর্থবছরে চাল আমদানির উপর শুল্ক ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2016, 01:53 PM
Updated : 2 June 2016, 02:16 PM

কৃষি খাতের উন্নয়নে সার ও সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণে এবারও নয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি ও প্রণোদনা হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় চাল আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন। বর্তমানে চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি দেশীয় উৎপাদনের স্বার্থে রেপসিড কেক, সয়াকেক এর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করেন।

দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের উপকরণ ‘স্ট্যাবিলাইজার ফর মিল্ক’ এর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।

দেশের পুষ্টির প্রধান উৎস হাঁস-মুরগি আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক কর রেয়াত আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকার প্রস্তাব করেছেন মুহিত।

দেশীয় কৃষি পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ দিতে কৃষি পণ্য আমদানির উপর ১ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন তিনি।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ২৭ হাজার ৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় খাতভিত্তিক বরাদ্দের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ এটা।

অর্থমন্ত্রী কৃষি খাতে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ১৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করলেও সংশোধিত বাজেটে তার আকার দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।

শুরু হয়েছে ধান কাটার মৌসুম, মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ধান কেটে ঘরে নিতে ব্যস্ত কৃষক। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

শুরু হয়েছে ধান কাটার মৌসুম, মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ধান কেটে ঘরে নিতে ব্যস্ত কৃষক। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

এ খাতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল নয় হাজার কোটি টাকা; সংশোধিত বাজেটে তা হয় সাত হাজার কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় কৃষি খাতে নতুন অর্থবছরে ২২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন।

তার মধ্যে এ খাতের উন্নয়নে সার ও সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণে এবারও নয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি ও প্রণোদনা হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।

“কৃষির ক্রমবর্ধমান উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ, কৃষি উপকরণ প্রণোদনা প্রদান, সুষম সারের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রবর্তন ও কৃষকের ব্যাংক একাউন্ট খোলা এবং কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা প্রদানে এ প্রণোদনার অর্থ ব্যয় করা হবে।”

কৃষি গবেষণা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি গবেষণার ফান্ড মঞ্জুর এবং উৎপাদন বৃদ্ধি ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার্থে জৈব সারের ব্যবহার ও উৎসাহিতকরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকেব বলে জানান তিনি।

কৃষি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এডিপির আওতায় আরও এক হাজার ৮৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাবও করেছেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, পল্লী ও নগর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী তিন বছরের মধ্যে ১৪ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ, ৩৪ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, পাকা সড়কে ৮৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ/রক্ষণাবেক্ষণ, ৫৭০টি হাট-বাজার, গ্রোথ সেন্টার উন্নয়ন, ১৭৫টি উপজেলা কমপ্লেক্স ও ৪৯৪টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

ক্ষুদ্র সঞ্চয় উৎসাহিতকরণের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের পুঁজি গঠনের লক্ষ্যে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মুহিত বলেন, এই বিশাল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা।

এ খাতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য তিন হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।