রিজার্ভ চুরি: একই কায়দায় লোপাট হয়েছিল সোনালী ব্যাংকের টাকা

তিন বছর আগে ভুয়া সুইফট মেসেজের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের আড়াই লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়ার সেই প্রায় ভুলে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির কোনো যোগাযোগ আছে কি না- পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2016, 04:02 AM
Updated : 26 May 2016, 04:02 AM

সোনালী ব্যাংক হ্যাক করে অর্থ চুরির সেই ঘটনার পেছনে কারা ছিল, তা জানতে পারেনি পুলিশ। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই অর্থ উদ্ধারও করতে পারেনি। 

ঘটনার এক বছর পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তখনকার সচিব এম আসলাম আলম সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে ওই ঘটনা প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষের কাছেও অজানা ছিল।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের ঘটনাতেও সুইফট ম্যাসেজিং প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে অর্থ পরিশোধের ভুয়া অনুরোধ পাঠিয়ে সারা হয়েছিল চুরি। বাংলাদেশের বাইরে এ বিষয়টি নিয়ে সে সময় তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে একই কায়দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত সাইবার চুরির ঘটনাটি ঘটার আগে সোনালী ব্যাংকের মামলা একপ্রকার হিমঘরেই ছিল।

সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১৩ সালের সেই চুরির বিষয়টি সুইফট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তুরস্কের এক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলা সেই টাকা আর উদ্ধার করা যায়নি।

সোনালী ব্যাংকের আইটি ব্যবস্থাপনায় যুক্ত এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, ওই ঘটনায় হ্যাকাররা ব্যাংকের কোনো একটি কম্পিউটারে কি লগার সফটঅয়্যার বসিয়ে পাসওয়ার্ড চুরি করে। পরে সেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই ভুয়া সুইফট মেসেজ পাঠানো হয়।

বিষয়টি ধরা পড়ার পর অর্থ লেনদেনের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছিল। কিন্তু পরে আর তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি, ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল দুজনকেই।  

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত রয়টার্সকে বলেছেন, সেই হ্যাকিংয়ে জড়িতরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।  

“আসলে ঠিক কী ঘটেছিল, তাও আমরা জানতে পারিনি,” বলেন তিনি।

রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির কৌশলের সঙ্গে মিল থাকায় এ ঘটনার তদন্তে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা সোনালী ব্যাংকের ঘটনাটি নতুন করে খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। দুই ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সে বিষয়টিও তারা বোঝার চেষ্টা করছেন।

পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “এটা ইন্টারেস্টিং। এটা আমাদের দেখতে হবে।”

 

গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার লোপাট হয়।

হ্যাকিংয়ের এই ঘটনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুইফটের নিরাপত্তা ব্যবস্থার খুঁত নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়। তবে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের মেরুদণ্ডে পরিণত হওয়া এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটি তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

আরও খবর-