‘যক্ষ্মা প্রতিরোধে ১ টাকা বিনিয়োগে বাঁচবে ২১ টাকা’

যক্ষ্মা প্রতিরোধে এক টাকা খরচ করলে ২১ টাকা লাভ হওয়ার গবেষণালব্ধ তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট বিয়র্ন লোমবোর্গ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2016, 05:28 PM
Updated : 12 May 2016, 05:44 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট বলেন, “যক্ষ্মায় প্রতিবছর বাংলাদেশে ৮১ হাজার লোক মারা যায়। ১১ জনের মধ্যে একজন এই রোগে মরে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিজন রোগীর পেছনে খরচ হয় ৭ হাজার ৮৫০টাকা।

“এখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এর প্রতিরোধে এক টাকা খরচ করলে তার সামাজিক, স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত লাভ হিসাবে আপনি ফিরতি পাবেন ২১ টাকা।”

ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে যক্ষ্মাসহ ৭২টি অগ্রাধিকার খাত চিহ্নিত করে সেগুলোতে বিনিয়োগে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার ও ব্র্যাকের গবেষণালব্ধ এসব অগ্রাধিকার খাত তুলে ধরে লাভের হিসাব দেন লোমবোর্গ।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদষ্টা মসিউর রহমান খাতগুলোকে সরকারের নীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্তি করা জরুরি বলে অভিমত দেন।

আলোচনায় যক্ষ্মা, শিশু পুষ্টি ও ই-প্রকিউরমেন্টকে শীর্ষ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে তুলে ধরে লোমবোর্গ বলেন, “বাজেট খরচকে পরিকল্পিত করার কথা বলছি আমরা। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।

“ … বাংলাদেশে বাজেটের ১ শতাংশ এসব অগ্রাধিকার খাতে খরচ করা হলে সেখান থেকে পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত লাভ আসবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।”

অন্যান্য অগ্রাধিকারমূলক খাতের মধ্যে ডিজিটাল ভূমি জরিপ, ঢাকায় গণপরিবহনে বাসের অগ্রাধিকার, মেয়েদের জন্য মাধ্যমিকে শিক্ষার ‍সুযোগ বাড়ানো, খর্বাকৃতি সমস্যায় মনোসামাজিক অনুপ্রেরণা, শহুরে বস্তির শিশুদের টিকাদান এবং উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসার উপর বিস্তারিত তুলে ধরেন কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট।

ই-প্রকিউরমেন্টে এক টাকা বিনিয়োগে ৬৬৩ টাকা লাভ আসতে পারে- গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ প্রতিবছর সরকারি ক্রয় পদ্ধতির পেছনে ৭২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। এই প্রক্রিয়াকে আরও দক্ষ করে তোলার মাধ্যমে বিলম্ব ও খরচ বৃদ্ধি এড়ানো সম্ভব।

“গবেষণায় পাওয়া গেছে ই-প্রকিউরমেন্টে এই খরচ কমে আসতে পারে ১৪৪ কোটি টাকা। প্রতিবছর আনুমানিক ৫ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা সঞ্চয় হতে পারে।”

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই গবেষণায় প্রথমে বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশের গবেষক ও স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শে এক হাজারের বেশি অগ্রাধিকার ঠিক করা হয়। সেখান থেকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ফিন ই কিডল্যান্ডের নেতৃত্বে একটি ‘ইমিনেন্ট প্যানেল’ ৭২টি খাত ঠিক করে।

পরে সংবাদ সম্মেলনে লোমবোর্গ বলেন, “আমরা অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছি। সেসময় অর্থমন্ত্রীসহ নীতিনির্ধারকরা ছিলেন। তারা এ অগ্রাধিকারগুলোতে বিনিয়োগে উৎসাহ দেখিয়েছেন।”

সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে (এসডিজি) এই অগ্রাধিকার ঠিক করার ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসাবে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক কিডল্যান্ড বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়ভাবে অগ্রাধিকার-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম এগিয়ে এসেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে এটা দিক-নির্দেশনা দেবে।

প্রত্যেক দেশই সীমিত সম্পদ নিয়ে সমস্যা মোকাবেলা করে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এজন্য যে সম্পদ আছে তা সঠিক পন্থায় খরচ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। যে টাকা খরচ করবো তার ফিরতি লাভও সর্বোচ্চ নিয়ে আসার দিকে মনোযোগী হতে হয়।”

“আমরা এখানে কিছু অগ্রাধিকারের র‌্যাঙ্কিং করেছি, কিছু সমাধান আশ্চর্যজনকভাবে উপকারী হবে। ই-প্রকিউরমেন্টের ক্ষেত্রে এক টাকার বিনিময়ে আনুমানিক ৬৬৩ টাকা ফিরতি পাওয়ার বিষয় এখানে উঠে এসেছে,” বলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদষ্টা বলেন, “অগ্রাধিকারগুলোকে এখন নীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্তি করা জরুরি। তা না হলে এর মধ্যে শূন্যতা থেকে যাবে।”

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ মুসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের রিসার্চ অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডিভিশনের পরিচালক আবদুল বায়েস বক্তব্য দেন।