চুরির অর্থ ফেরতে আইন খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করে ফিলিপিন্সে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ ফেরত আনতে দুই দেশের আইনগত বিষয় পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2016, 10:46 AM
Updated : 21 April 2016, 10:46 AM

টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বৃহস্পতিবার এক সভার পর সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “ফিলিপাইন থেকে অর্থ ফেরত আনতে লিগ্যাল অ্যাডভাইস দরকার। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

“কোন প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নিতে হবে- এই দুই সংস্থা সেটা আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করবে।”

গত ১৩ এপ্রিল সাত সদস্যের এই আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে প্রতিনিধিকে টাস্কফোর্সের সদস্য করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) মেসেজিং সিস্টেমে ‘ভুয়া’ বার্তা পাঠিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১০ কোটি ডলার ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে সরানো হয়।

বানান ভুলের কারণে শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ডলার আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের অধিকাংশ ক্যাসিনোয় যাওয়ার পর দেশটি থেকে পাচার হয়ে যায় বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটি।আদালতে মামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।৩০ জুনের মধ্যেই ‘উদ্ধারযোগ্য’ সব টাকা ফেরত দেওয়া যাবে বলে সিনেট কমিটির আশা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আট কোটি ডলার চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন ২০ দিনের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে ফিলিপিন্সের একটি আদালত।

ফিলিপিন্সের মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিল-এএমএলসি কিম অং, ইস্টার্ন হাওয়াই ও গোর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করার পর সোমবার সম্পদ জব্দের এ আদেশ দেয় আদালত।

অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য ওই মামলায় বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে পক্ষভুক্ত হয়ে মালিকানা দাবি করতে হবে বলে ফিলিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারারে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তা না হলে ওই অর্থ ফিলিপিন্সের সরকারি সম্পত্তি হিসেবে ঘোষিত হবে।

হাতিয়ে নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলারের একটা অংশ হাতে আসার কথা স্বীকার করে ক্যাসিনো জাংকেট এজেন্ট কিম অং এর মধ্যে তিন দফায় মোট ৯৮ লাখ ডলার ফেরত দিয়েছে বলে ফিলিপিন্সের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

কিম অংয়ের পক্ষ থেকে গত ৩১ মার্চ ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪ এপ্রিল আট লাখ ৩০ হাজার ৫৯৫ ডলার এএমএলসির হেফাজতে দেওয়া হয়। গত সোমবার তার কোম্পানি ইস্টার্ন হাওয়াই আরও ২০০ মিলিয়ন পেসো (প্রায় ৪৩ লাখ ডলার) জমা দেয়।

প্রথম দুই দফায় তার ফেরত দেওয়া অর্থ কর্তৃপক্ষকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে বলেছে আদালত। অংয়ের আরও আড়াইশ মিলিয়ন পেসো ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে।

অংয়ের ভাষ্যমতে, বেইজিংয়ের শুহুয়া গাও এবং ম্যাকাওয়ের ডিং জিজের নামে দুজন জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশের ওই অর্থ ফিলিপিন্সে নিয়েছিলেন।

‘ডিং গ্রুপ’র ১০৭ মিলিয়ন পেসোর একটি অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে ম্যানিলার সোলাইরি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে ওই গ্রুপের জুয়াড়িদের কক্ষ থেকে আরও ১ দশমিক ৩৪৭ মিলিয়ন পেসো জব্দ করে তারা।

এই অর্থ ফেরত দিতে আদালতের আদেশের অপেক্ষায় আছে তারা।