৩০ জুনের মধ্যে বাংলাদেশকে টাকা ফেরতের আশা ফিলিপিন্স সিনেটের

আদালতে মামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ফিলিপিন্সে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2016, 05:46 AM
Updated : 21 April 2016, 09:58 AM

সিনেট কমিটি আশা করছে, নতুন সরকার ফিলিপিন্সের দায়িত্ব নেওয়ার আগে আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই ‘উদ্ধারযোগ্য’ সব টাকা ফেরত দেওয়া যাবে।

ফিলিপিন্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট অ্যাকুইনো আগামী ৩০ জুন ক্ষমতা ছাড়ছেন।

দেশটির সিনেটের প্রেসিডেন্ট প্রো টেম্পোরে রাল্ফ রেক্টো এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এটা আমাদের জাতীয় সময়সীমা হওয়া উচিত। প্রেসিডেন্ট অ্যাকুইনো ব্যক্তিগত জীবনে যাওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই দেখতে হবে যে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে যেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব তা সঠিক মালিকের কাছে ফেরত গেছে।”    

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আট কোটি ডলার চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন ২০ দিনের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে ফিলিপিন্সের একটি আদালত।

দেশটির ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং এরইমধ্যে যে অর্থ দেশটির মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিলকে ফেরত দিয়েছেন তার একাংশও আদালতের সম্পদ জব্দের এ আদেশের আওতায় রয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে এসেছে।

এছাড়া ফিলিপিন্স ন্যাশনাল ব্যাংকে (পিএনবি) অংয়ের ৪ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন পেসোর অ্যাকাউন্ট, একই ব্যাংকে ক্যাসিনো অপারেটর ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কোম্পানি লিমিটেডের ৫ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন পেসোর অ্যাকাউন্ট এবং রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে (আরসিবিসি) ব্যবসায়ী উইলিয়াম গোর নামে থাকা ১৯ হাজার ৯৮৩ পেসোর অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ফিলিপিন্সের মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিল-এএমএলসি কিম অং, ইস্টার্ন হাওয়াই ও গোর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করার পর সোমবার সম্পদ জব্দের এ আদেশ দেয় আদালত। আগামী ২ মে এ বিষয়ে শুনানির দিন রাখা হয়েছে।

অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য ওই মামলায় বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে পক্ষ হয়ে অর্থের মালিকানা দাবি করতে হবে বলে ফিলিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারার- এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অন্যত্থায় এ অর্থ ফিলিপিন্সের সরকারি সম্পত্তি হিসেবে ঘোষিত হবে বলে এতে বলা হয়।

তবে ফিলিপিন্সের ফাইন্যান্স কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আদালতে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের কথা ভাবছেন না এবং বাংলাদেশকে অর্থ ফেরতে কেউ আপত্তি করবে না বলে আশার কথা বলছে ইনকোয়ারার। এক্ষেত্রে কিম অংয়ের স্বেচ্ছায় অর্থ ফেরত দেওয়ার কথাও উঠে এসেছে।

হাতিয়ে নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলারের একটা অংশ হাতে আসার কথা স্বীকার করেছেন কিম অং। তবে চুরি করে ওই অর্থ নেওয়ার বিষয়টি তার জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন তিনি।

ফিলিপিন্সের সিনেটে শুনানিতে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কাম সিন অং ওরফে কিম অং

এই ক্যাসিনো জাঙ্কেট এজেন্টের কাছ থেকে এরইমধ্যে তিন দফায় মোট ৯৮ লাখ ডলার ফেরত এসেছে বলে ফিলিপিন্সের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

কিম অংয়ের পক্ষ থেকে গত ৩১ মার্চ ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪ এপ্রিল আট লাখ ৩০ হাজার ৫৯৫ ডলার এএমএলসির তত্ত্বাবধানে রাখার জন্য দেওয়া হয়। পরে গত সোমবার তার কোম্পানি ইস্টার্ন হাওয়াইয়ের পক্ষ থেকে আরও ২০০ মিলিয়ন পেসো (প্রায় ৪৩ লাখ ডলার) দেওয়া হয়েছে।

প্রথম দুই দফায় তার ফেরত দেওয়া অর্থ কর্তৃপক্ষকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে বলেছে আদালত।

অংয়ের আরও আড়াইশ মিলিয়ন পেসো ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে।

অংয়ের ভাষ্যমতে, বেইজিংয়ের শুহুয়া গাও এবং ম্যাকাওয়ের ডিং জিজের নামে দুজন জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশের ওই অর্থ ফিলিপিন্সে নিয়েছিলেন।

‘ডিং গ্রুপ’র ১০৭ মিলিয়ন পেসোর একটি অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে ম্যানিলার সোলাইরি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে ওই গ্রুপের জুয়াড়িদের কক্ষ থেকে আরও ১ দশমিক ৩৪৭ মিলিয়ন পেসো জব্দ করে তারা।

এই অর্থ ফেরত দিতে আদালতের আদেশের অপেক্ষায় আছে তারা।

এদিকে বাংলাদেশের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের যে ব্যাংকের মধ্য দিয়ে দেশটির মুদ্রা ব্যবস্থায় ঢুকেছিল সেই রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংকের কোষাধ্যক্ষ রাউল তান বুধবার পদত্যাগ করেছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমে এসেছে।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভুয়া নির্দেশনা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংকে পাঠানো হয়। ওই ব্যাংকের চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে ওই অর্থ ক্যাসিনোর জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয় বলে স্থানীয় পত্রিকাগুলি খবর প্রকাশ করে।