সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া এই ঘটনার তদন্তে শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপিন্স ঘুরে আসার পর সিআইডির অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক শাহ আলম সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেন।
ওই ২০ জন শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিন্স, চীন ও জাপানের নাগরিক বলে জানালেও ‘তদন্তের স্বার্থে’ তাদের পরিচয় প্রকাশ করেননি সিআইডির তদন্ত দলের এই সদস্য।
ওই ঘটনায় বাংলাদেশের কেউ জড়িত ছিলেন কিনা- এমন প্রশ্নে শাহ আলম বলেন, “যথাযথ সুরক্ষার ক্ষেত্রে কারও না কারও খামখেয়ালিপনা তো ছিলোই। যারা এসব খামখেয়ালিপনার সঙ্গে জড়িত, তারা নতুন প্রযুক্তির সব বিষয় বুঝতো না বলে অজুহাত দিচ্ছে। এগুলো আমরা বের করার চেষ্টা করছি। লিংক পেলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’
তবে রিজার্ভের টাকা যে ‘হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেই’ সরানো হয়েছে, সে বিষয়ে ‘কোনো সন্দেহ নেই’ বলে মন্তব্য করেন এই তদন্ত কর্মকর্তা।
“বেশকিছু এজেন্সি বা ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা যে দায়িত্বে ছিলেন তা তারা করেননি। বিশেষ করে নিরাপত্তা বিষয়গুলো। যথাযথ সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার পেছনে অবশ্যই খামখেয়ালিপনা ছিল। তবে ‘ক্রিমিনাল ইনটেশন’ ছিল কিনা- তা দেখা হচ্ছে।
যে বিদেশিদের শনাক্ত করা হয়েছে, বাংলাদেশে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং আইনে যে কোনো দেশের যে কোনো লোকের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ আনতে পারি, এতে কোনো বাধা নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশে কতজনকে শনাক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে এই সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, এখনও সংখ্যা বলার ‘সময় আসেনি’।
বলা হচ্ছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে সুইফট মেসেজের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের সঞ্চিত অর্থ থেকে দশ কোটি ডলার ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কায় পাঠাতে বলা হয়।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮ কোটি ডলারের অধিকাংশই জুয়ার আখড়া হয়ে দেশটি থেকে পাচার হয়ে গেছে বলে গণমাধ্যমের খবর।
চাঞ্চল্যকর এই জালিয়াতির ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে এক মাস পর ফিলিপিন্সের একটি সংবাদপত্রের খবরের মাধ্যমে।
এ পর্যন্ত যেসব তথ্য জানা গেছে তার বেশিরভাগই পাওয়া গেছে ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার তদন্তের ভিত্তিতে দেশ দুটির সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন থেকে।
বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মধ্যে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বড় ধরনের রদবদল আসে।
ঘটনার ৪০ দিনের মাথায় বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকায় মামলা দায়ের করলে সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে সিআইডির দুটি দল এপ্রিলের শুরুতে ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কা যায়।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম বড় এই আর্থিক জালিয়াতির তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের পাশাপাশি ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম।
সিআইডির নতুন ভবনের অডিটোরিয়ামে এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিশেষ সুপার আব্দুল্লাহ হেল বাকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খাঁন উপস্থিত ছিলেন।
এই ঘটনার পূর্ণ তদন্তে সরকার সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে। ওই কমিটি তদন্তের বিষয়ে এক মাস আগে গণমাধ্যমে কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।