পানামা পেপার্সে বাংলাদেশি নাম খুঁজছে এনবিআর

পানামা পেপার্সে বাংলাদেশের কারও নাম রয়েছে কি না, দুর্নীতি দমন কমিশনের পর তা খতিয়ে দেখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2016, 11:40 AM
Updated : 13 April 2016, 11:47 AM

সংস্থার চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেছেন, “মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে আমাদের উপর যে অর্পিত দায়িত্ব সেটা সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করছি।”

বিশ্বজুড়ে আলোচিত পানামা পেপার্সে বাংলাদেশি কারও নাম পাওয়া গেছে কি না- ইআরএফের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় সেই প্রশ্ন করা হয় এনবিআর চেয়ারম্যানকে।

তিনি বলেন, “এ বিষয়ে দুদক, সিআইডি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইউনিট এ তিনটি সংস্থা মানি লন্ডারিং রোধে একযোগে কাজ করবে।”

পানামার ল ফার্ম মোস্যাক ফনসেকার গোপন নথি ফাঁসে রথী-মহারথীদের কর ফাঁকির চিত্র উঠে আসা নিয়ে বিশ্বুজড়ে আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশি কারও নামও এতে রয়েছে কি না, তার তদন্তে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্শিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) মোস্যাক ফনসেকার গত ৪০ বছরের নথি প্রকাশ করে, যাতে তাদের অসংখ্য মক্কেলের নাম ফাঁস হয়ে যায়।

এই মক্কেলদের মধ্যে রয়েছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন, সৌদি বাদশাহ সালমান, আমিরাতের আমির খলিফা বিন জায়েদ বিন সুলতান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বাবা, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহযোগীর নাম রয়েছে।

বলা হচ্ছে, করজাল এড়িয়ে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়তে, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেশে লুটের টাকা বিদেশে পাঠাতে মোস্যাক ফনসেকার পরামর্শ নিয়েছেন তারা।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সন্তান, বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন ও ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের নাম এলেও আইসিআইজের এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা নথিতে কোনো বাংলাদেশির নাম পাওয়া যায়নি।

‘বাজেট হবে অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য আতঙ্কের’

আসছে বাজেটে সৎ ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেওয়া হবে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর বলেন, “‘আগামী বাজেট হবে অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক।”

আগামী জুন মাসে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট সংসদে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রতিবছরই জাতীয় বাজেট প্রণয়নের আগে অর্থনীতিবিদ, গবেষকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থনীতি বিষয়ক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে সভা হয়।

এনবিআর সম্মেলন কক্ষে এই প্রাক বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল সঞ্চালনা করেন।

বৈঠকে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট) জাহাঙ্গীর হোসাইন, প্রাক বাজেট সমন্বয়কারী আকবর হোসেন, ইআরএফ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমানসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

নজিবুর বলেন, “অভ্যন্তরীণ সম্পদের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন তথা বাজেট প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি। আমরা অভ্যন্তরীণ সম্পদের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে যাচ্ছি।”

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে এনবিআর। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।

পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। আদায় কম হওয়ায় এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা জানি, সামনের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বড় হয়েছে। যদি আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যেতে পারি তাহলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।”

বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকরীদের ‘জাতীয় শত্রু’ আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে এনবিআরের কঠোর অবস্থানের কথাও জানান তিনি।