রিজার্ভ চুরি: ৪৬ লাখ ডলার ফেরত দিলেন অং

বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ থেকে ‌‘ধার উসুল’ হিসেবে পাওয়া ৪৬ লাখ ডলারের বেশি ফিলিপিন্সের মুদ্রা পাচার কর্তৃপক্ষের (এএমএলসি) কাছে ফেরত দিয়েছেন ক্যাসিনোর জাঙ্কেট অপারেটর কিম অং।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2016, 03:00 PM
Updated : 31 March 2016, 03:00 PM

জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থ ফিলিপিন্সে যাওয়ার ঘটনায় সেদেশের সিনেটের ব্লু রিবন কমিটির শুনানিতে অর্থ ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার তা ফেরত দিলেন চীনা বংশোদ্ভূত এই ব্যবসায়ী।

কিম অংয়ের আইনি পরামর্শক ইনোসেনসিও ফেরারের বরাত দিয়ে ফিনিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারার জানায়, ওই অর্থের সুরক্ষার জন্য ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে (বিএসপি) রাখতে তা মুদ্রা পাচার কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (বিএসপি) ভেতরই এএমএলসির অফিস রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে এএমএলসি ও বিএসপিতে গিয়ে এই অর্থ পরিশোধ করেন অংয়ের আইনি পরামর্শক ফেরার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেকগুলো কাউন্টিং মেশিনে গোনা হলেও ১০০ ডলারের নোটে ফেরত দেওয়া অর্থ গুনতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানান তিনি।

ওই অর্থ গ্রহণের পর ‘সুরক্ষার জন্য অর্থ গৃহীত’ মর্মে এএমএলসির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাকে-আবাদ, ফিলিপিন্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেস এবং এএমএলসি সদস্য এমানুয়েল এফ. দোক স্বাক্ষর করেন বলে জানান ইনোসেনসিও ফেরার।

মুদ্রা পাচার কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার আগে ওই অর্থ কোথায় রক্ষিত ছিল তা না জানালেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নেওয়ার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি ভ্যান ও তার সঙ্গে দুজন নিরাপত্তারক্ষী দেয় বলে জানিয়েছেন অংয়ের এই আইন পরামর্শক।

ফেরার বলেন, “আদালত (এর হস্তক্ষেপ) ছাড়াই জালিয়াতি হওয়া অর্থের একটি অংশ ফেরত দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ফিলিপিন্সের মর্যাদা আবার পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

ফেব্রুয়ারির শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার ভুয়া নির্দেশনা পাঠিয়ে ফিলিপিন্সের রিজল কর্মাশিয়াল ব্যাংক পাঠানো হয়।

রিজল ব্যাংকের চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে ওই অর্থ ক্যাসিনোর জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ফিলিপিন্সের মুদ্রা ব্যবস্থায় মিশে যায় বলে স্থানীয় পত্রিকাগুলি খবর প্রকাশ করে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনার পেছনে চীনা বংশোদ্ভূত ক্যাসিনোর জাঙ্কেট অপারেটর কিম অংকেই মূল ব্যক্তি বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।

তবে সিনেট কমিটির শুনানিতে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সে নেওয়ার পেছনে দুই বিদেশির নাম বলেন তিনি। তার দাবি, বেইজিংয়ের শুহুয়া গাও এবং ম্যাকাওয়ের ডিং জিজে নামে দুই জাঙ্কেট এজেন্ট ওই অর্থ ফিলিপিন্সে নিয়ে যায়।

অংয়ের ভাষ্যমতে, গাও প্রায়ই ফিলিপিন্সে যাওয়া-আসা করেন এবং গত আট বছর ধরে জুয়ার মক্কেল (জাঙ্কেট এজেন্ট) এনে দেন। এই মহলে পরিচিতি রয়েছে তার। ম্যাকাওয়ের ব্যবসায়ী ডিংকেও তিনিই তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

গাও একবার সোলায়ার রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনোতে এক সপ্তাহের মধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন ফিলিপিনো পেসো (প্রায় এক কোটি  ডলার) হেরে ওই অর্থ তার কাছ থেকে ধার করেছিলেন। বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ থেকে ওই এক কোটি ডলার গাও তাকে পরিশোধ করেন বলে সিনেট শুনানিতে দাবি করেন অং।

এই এক কোটি ডলারের বাইরে দুটি ক্যাসিনোর জুয়ার অ্যাকাউন্টে থাকা আরও ৫৫ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

এছাড়া আরও ১৭ মিলিয়ন ডলার এখনও হাতবদল হয়নি এবং তা মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের কাছে থাকতে পারে বলে অংয়ের দাবি। তবে তা অস্বীকার করেছেন ফিলরেমের কর্মকর্তারা।

এদিকে লোপাট ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক অর্থ এখনও ফিলিপিন্সে রয়েছে জানিয়ে তা বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়া সম্ভব বলে মঙ্গলবারের শুনানির পর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির সিনেটর রালফ রেক্তো।

সিনেটরের ওই বিবৃতির বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার ম্যানিলা বুলেটিন জানায়, প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার দুটি ক্যাসিনো ও মুদ্রা বিনিময় ব্রোকারেজ হাউজের কাছে রয়েছে।