কিম অংই অর্থ লোপাটের হোতা?

চীনা বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো ব্যবসায়ী কাম সিন অং ওরফে কিম অং বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী বলে সন্দেহ করছেন ফিলিপিন্সের একজন সিনেটর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2016, 07:39 AM
Updated : 20 March 2016, 08:00 AM

সিনেটরদর কাছে শুনানিতে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস-দেগিতোর বক্তব্যের সূত্র ধরে তার এ সন্দেহ।

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা দেগিতো বৃহস্পতিবার সিনেট কমিটির শুনানিতে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার পর তাকে আর অর্থ লোপাটের ঘটনায় ‘সবচেয়ে বেশি দোষী’ মনে করছেন না সিনেটর সের্গিও ওসমেনা।

ডেইলি ইনকোয়ারারকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আরসিবিসির যে কটি অ্যাকাউন্টে ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছিল, অয়ংই সেগুলো খোলার জন্য দেগিতোকে বলেছিলেন। ফিলরেম নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ডলার ভাঙানোর নির্দেশও তিনি দেন।

বাংলাদেশের অর্থ চুরির ঘটনা তদন্তকারী সিনেট ব্লু রবিন কমিটিতে অংকেও তলব করা হবে এবং সেখানে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান ওসমেনা।

মাইয়া সানতোস দেগিতো- ছবি:রয়টার্স

“এ ঘটনার একজন হোতা আছে, একজন পরিকল্পনাকারী এবং এখন মনে হচ্ছে তিনি কিম অং। তবে তাকে আমাদের একটা সুযোগ দিতে হবে এবং কমিটির কাছে বক্তব্য তুলে ধরার জন্য তাকে বিদেশ সফর থেকে ফেরার সুযোগ দিতে হবে।

“এখানে সে বড় খেলোয়াড়।”

‘চিকিৎসার জন্য’ অং এখন ফিলিপিন্সের বাইরে আছেন বলে তার আইনজীবী সিনেট কমিটিকে জানিয়েছেন।

১৫ বছর আগেও কিম অং একবার সিনেট ব্লু রিবন কমিটির শুনানির মুখোমুখি হন বলে ফিলিপিন্সভিত্তিক এবিএস-সিবিএন নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অবৈধ মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সে সময় ৩৯ বছর বয়সী অংকে ডাকা হয়েছিল। ওই শুনানির নথি অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে এক সিনেটরের সঙ্গে মাদক চোরাচালানিদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করার অভিযোগ ছিল।

এবিএস-সিবিএনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর বয়সে চীন থেকে ফিলিপিন্সে আসেন অং। কলেজের ছাত্র থাকাকালে লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্থানীয় একটি সিগারেট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজে যোগ দেন।

তবে পরবর্তীতে একজন ব্যবসায়ী এবং পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের সঙ্গে তার সখ্য কীভাবে গড়ে ওঠে তা স্পষ্ট নয়।

এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা না গেলেও ১৫ বছর আগে যখন তিনি সিনেট কমিটির শুনানিতে যান তখনই প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়।

ফিলিপিন্সের ‘ব্লু রিবন’ সিনেট কমিটিতে অর্থ লোপাটের ঘটনার শুনানি চলছে। ছবি: ফিলিপিন্স সিনেট

সে সময় বক্তব্যে ফিলিপিন্সের সাবেক পুলিশ প্রধান প্যানফিলো ল্যাকসনের (তৎকালীন সিনেটর) সঙ্গে বন্ধুত্বের পাশাপাশি তৎকালীন পুলিশ প্রধান লিন্দ্রো মেনদোজারসহ বাহিনীটির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজনের সঙ্গেও সুসম্পর্কের কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

ব্যাংক ম্যানেজার দেগিতো কেন অংয়ের অনুরোধ রাখলেন- এ প্রশ্নের জবাবে ওসমেনা বলেন, তারা একে অপরকে চিনতেন।

তার ভাষ্যমতে, অং পাঁচটি ডলার অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য দেগিতোকে অনুরোধ করেন এবং সেগুলোর জন্য তথ্যাদি সরবরাহ করেন। মাইডাস হোটেলে এক বৈঠকে অ্যাকাউন্টের মালিকদের সঙ্গে দেগিতোকে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি।

দেগিতো তাদের পরিচয়পত্র যাচাই করেন এবং পরে তার কাছে এসব অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আড়াই হাজার ডলার পাঠানো হয় বলে ওসমেনা জানান।

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ওই পাঁচ অ্যাকাউন্টের মধ্যে চারটিতে যায়। তবে সিনেট কমিটির শুনানিতে ওই চার অ্যাকাউন্টের মালিককে তলবের জন্য নাম-ঠিকানা খুঁজলে দেখা যায় সেগুলো ভুয়া।