‘বয়স্ক’ মুহিতের কাছে ‘তারুণ্যের দৃষ্টিভঙ্গী’ চাইলেন আতিউর

রিজার্ভ চুরি নিয়ে চাপের মধ্যে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়া আতিউর রহমান অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাফল্য কামনা করেছেন।

শেখ আবদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2016, 04:30 PM
Updated : 15 March 2016, 07:49 PM

দায়িত্ব পালনকালে অর্থমন্ত্রীর সহযোগিতা পাওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেছেন, “তিনি (মুহিত) বয়ষ্ক মানুষ, আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমি আশা করব, আগামী দিনের যে অর্থনীতি সেটাকে তিনি তরুণের দৃষ্টিতে দেখবেন। দেখে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও উপরে নিতে সাহায্য করবেন আমাদের।”

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ডলার লোপাট হওয়ার পর তা মন্ত্রণালয়কে না জানানোয় আতিউরের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন মুহিত। এই সময়ে তার ভারত সফরে যাওয়ার সমালোচনাও করেন তিনি।

সোমবার আতিউর ভারত থেকে ফেরার আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। সেদিন বিকালে দেশে ফিরে আতিউর মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন।

শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে গুলশানে গভর্নরের সরকারি বাড়িতে আতিউর সাংবাদিকদের বলেছিলেন,পদত্যাগের প্রস্তুতি তার রয়েছে, তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলেই তিনি পদত্যাগ করবেন।

তখন নিজের সাত বছরের দায়িত্ব পালনের নানা অর্জন তুলে ধরার পাশাপাশি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিজের বিহ্বলতার কথাও জানিয়েছিলেন আতিউর।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ফিরে বাড়ির লনে এক সংবাদ সম্মেলনে আতিউর বলেন, বিতর্ক এড়াবার জন্য ‘নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগ করে এসেছেন তিনি।

“আমি বীরের বেশে বিদায় নিচ্ছি,” বলেন তিনি; প্রথম গভর্নর হিসেবে বাংলাদেশে যাকে এই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়ে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

গুলশানে গভর্নর হাউসে সংবাদ সম্মেলনে আতিউর রহমান

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদ ছোড়ার পর আবার শিক্ষকতায় ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক। আশা করছেন, ওই ভূমিকায় সফল হবেন তিনি।

২২ মিনিটের বক্তব্যে ডিজিটাল ও সবুজ ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলারে তোলা, কৃষকদের জন্য ব্যাংক একাউন্ট খোলার মতো উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন আতিউর।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পরার খেদও ফুটে উঠে তার কথায়, দায়িত্ব পালনের সময় এই ব্যাংকগুলোর নানা কেলেঙ্কারি দেখতে হয়েছে যাকে।

“আমি আশা করব, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পরিচালনা করবার সুযোগ সরকার করে দেবে।”

যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই পদত্যাগ, তদন্ত করে তাতে জড়িতদের শাস্তিও চেয়েছেন পদত্যাগী গভর্নর।

“আমি চাই, যারা এই ঘটনার সাথে দেশে কিংবা বিদেশে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ইনভেস্টিগেশন করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমার ধারণা সেটা হবে, ইনভেস্টিগেশন হচ্ছে এবং সেটা হবে।”

আতিউরের পদত্যাগের বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ চুরির ঘটনায় মুদ্রা পাচার আইনে একটি মামলা করেছে। সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

সংবাদ সম্মেলনে নিজের পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দেখান আতিউর রহমান

নিজের সমালোচিত বিদেশ সফরের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমি দিল্লিতে গিয়েছিলাম ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, আইএমএফের ক্রিস্টিন লগার্ডের নিমন্ত্রণে, সেখানে দুটো প্যানেলে আমি অংশগ্রহণ করছি।

“এই বিষয়টি (রিজার্ভ চুরি) নিয়েও আমি তাদের সাথে কথা বলেছি। সুতরাং সেখানেও আমি কাজ করছিলাম, মাত্র দুদিন বাইরে ছিলাম, আর বাকি দুদিন ছুটির দিন ছিল। আমি সেখানে বসেও অনলাইনে সারক্ষণই কাজ করছিলাম।”

“সুতরাং এটাকে বড় একটা ঘটনা ঘটানোর মত পটভূমি করার প্রয়োজন ছিল না,” মনোবেদনা ফুটে ওঠে আতিউরের কণ্ঠে।

অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেরিতে জানানোর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, সাইবার অ্যাটাকের পর তা বোঝার জন্য কিছুটা সময় নিয়েছিলেন তিনি।

“আমরা বুঝবার চেষ্টা করছিলাম। বিদেশ থেকে এক্সপার্ট নিয়ে এসেছি, র‌্যাবকে ডেকেছি, এনএসআইকে ডেকেছি, তারা সকলে মিলে চেষ্টা করছে ঘটনাটা কোথায়? তার আগেই আমাকে সাবধান হতে হয়েছে, যাতে যে টাকা আছে তার মধ্যে যেন কেউ হাত দিতে না পারে। যে টাকা বের হয়ে গেছে, সেটা ফেরত আনার চেষ্টা করি। ফেরত আনতে গিয়ে আমাদের একটু সময় লেগেছে।”

যা করেছি, দেশের স্বার্থে- সংবাদ সম্মেলনে বলেন আতিউর রহমান

গভর্নরের দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার কথা স্মরণ করে আতিউর বলেন, “আমি পুরোপুরি সফল হয়েছি বলবো না। তবে নতুন ধারার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমি চালু করার চেষ্টা করেছি। সারা পৃথিবী এখন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটাকে মডেল হিসাবে নিচ্ছে।”

বিদায়বেলায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বর্ণনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তিনি মর্মাহত হয়েছেন, দুই চোখ দিয়ে তার পানি বের হয়েছে। তারপরও তিনি গ্রহণ করেছেন।

“বলেছেন, আমাকে আমাদের দেশে তো এরকম সংস্কৃতি তো বেশি নেই যে এরকম স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে আপনি আরেকটি অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এবং আপনি একজন সাহসী মানুষ।”

“এরপর আর কি চাইতে পারি, আমি একজন সাধারণ মানুষ। আপনারা জানেন আমি একেবারেই এই মাটির সন্তান, আমি একজন ভূমিপুত্র। আমি সেখান থেকে এই জায়গায় এসেছি, আমি বিধাতার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাজে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমার ওপর বিশ্বাস রেখে এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব দিয়েছিলেন,” বলেন তিনি।