চুক্তির পরদিনই বিদেশি কর্মী নেওয়া স্থগিতের ঘোষণা মালয়েশিয়ার

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে সমঝোতা স্মারকে সই করার পরদিনই বিদেশি শ্রমিক নেওয়া স্থগিত করেছে মালয়েশিয়া সরকার। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2016, 07:30 AM
Updated : 19 Feb 2016, 03:14 PM

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বারনামা জানিয়েছে, শুক্রবার সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে এক অনুষ্ঠানের পর দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি সব ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে (জনশক্তি নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের তালিকাভুক্ত দেশ) কর্মী নেওয়া স্থগিত রাখার এই ঘোষণা দেন।  

তিনি বলেন, “কতো শ্রমিক আমাদের প্রয়োজন সে বিষয়ে সরকার সন্তোষজনক তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশি কর্মী নেওয়া স্থগিত থাকবে।”

বিদেশি শ্রমিক ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তি লেভি আরোপের নিয়মও এই সময় স্থগিত থাকবে বলে জাহিদ হামিদি জানান।

মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দুটি বিষয় নিয়েই আপত্তি তোলা হাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে ‘জি টু জি’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। সে অনুযায়ী শুধু সরকারিভাবে মালয়েশিয়ার  ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছিল।

কিন্তু ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় ওই উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।  পরে মালয়েশিয়ার জনশক্তির জন্য বাংলাদেশ ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকায় এলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ত জায়েম ওই অনুষ্ঠানে বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তির ফলে দুই দেশই উপকৃত হবে। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান তার মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারকে ধন্যবাদও জানান।

কিন্তু তার পরদিনই দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধের কথা জানালেন।

মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি

তিনি বলেন, সরকার বিদেশি শ্রমিকদের পুনঃনিয়োগের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে এবং নতুন কোনো যাতে বিদেশিরা আর কাজ নিয়ে মালয়েশিয়ায় না আসতে পারে তা নিশ্চেত করার চেষ্টা করবে।

 “যেসব বিদেশি শ্রমিক তাদে কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অবৈধভাবে এ দেশে অবস্থান করছেন, তাদের গ্রেপ্তার করে যার যার দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

অবৈধ অধিবাসনবিরোধী শিগগিরই বড় আকারে অভিযান শুরু করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন জাহিদ হামিদি, যনি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, মালয়েশিয়ার তরুণরা সরকারের সিদ্ধান্তে সাড়া দেবেন এবং এখন যেসব কাজ বিদেশিরা করছেন, সেসব কাজের দায়িত্ব নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবেন।

এদিকে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সমঝোতায় তিন বছরে কতো শ্রমিক নেওয়ার কথা বলা হয়েছে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।

মন্ত্রিসভায় সমঝোতা স্মারকের খসড়া অনুমোদন এবং বুধবার তা সই হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক পাঠানোর কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, চুক্তিতে কোনো সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়নি।

চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় চুক্তি করে কুয়ালা লামপুরে ফেরার পর শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ত জায়েম।

তিনি বলেন, “১৫ লাখ শ্রমিকের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে তা হলো বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মীর সংখ্যা। বিশ্বের ১৩৯টি দেশে জনশক্তি রপ্তানির জন্যই বাংলাদেশ ওই তালিকা করেছে, যার মধ্যে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবও রয়েছে।” 

মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেবে বলে যে ‘ধারণা তৈরি হয়েছে’ তা ‘ভুল’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।