কর্ণফুলী টানেল হবে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকায়

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ নির্মাণ করে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরকে যুক্ত করতে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2015, 10:52 AM
Updated : 24 Nov 2015, 12:14 PM

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘কনস্ট্রাকশন অব মাল্টি ল্যান্ডরোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ র্শীষক এ প্রকল্প অনুমোদন পায়।

এই টানেল নির্মাণকে সরকারের ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ অভিহিত করে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে সরকার চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়।

শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের অবঠকের পর পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

মন্ত্রী বলেন, “এ টানেল নির্মাণ নিয়ে অনেক শঙ্কা ও সংশয় ছিল। আজ প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদনের মধ্য দিয়ে তা দূর হলো। এটি একটি স্বাপ্নের প্রকল্প। ২০২০ সালের আগেই এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।”

এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যার ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার যোগান দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক।

বাকি ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

মন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর ওপর দুটি সেতু রয়েছে। তার ওপর আরও ব্রিজ নির্মাণ করা হলে গোড়ায় পলি জমে নদী নাব্যতা হারাতে পারে। তাই সরকার এ টানেল নির্মাণ করছে।”

এ টানেল একদিকে চট্টগ্রাম শহররে বন্দর এলাকা ও অন্যদিকে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে। টানেল চালু হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ আরও সহজ হবে। কর্ণফুলীর দুই সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ কমবে বলেও সরকার আশা করছে।

এ টানেল নির্মাণের জন্য গত বছর ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এরপর বাংলাদেশ সেতু র্কতৃপক্ষ, চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) ও অভি অরুপ অ্যান্ড পার্টনার্স হংকং লিমিটেড যৌথভাবে টানেলের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা করে। গত ৩০ জুন সেতু কর্তৃপক্ষ ও সিসিসিসির মধ্যে হয় বাণিজ্যিক চুক্তি।

১২ উন্নয়ন প্রকল্প

মঙ্গলবারের সভায় কর্ণফুলী টানেলসহ মোট ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ইন্দ্রপুল হতে চক্রশালা পর্য়ন্ত বাঁক সরলীকরণ প্রকল্পে ৭৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয় হবে।  

৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে ‘কনস্ট্রাকশন অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং অ্যন্ড সেইলরস ব্যারাক ফর থ্রি কোস্ট গার্ড স্টেশন প্রজেক্ট’।

‘খুলনা শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

৫ হাজার ৫৪৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে ‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজসমুহের উন্নয়ন’ প্রকল্প।

‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ঢাকা প্রকল্প’ ৫২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে।

এক হাজার ৩৩১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন হবে ‘৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্প’।

১২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার ‘খুলনা প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো সুবিধা উন্নয়ন’ প্রকল্পও একনেকের অনুমোদন পেয়েছে।

‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন (প্রথম পর্য়ায়)’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

২৬৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে ‘কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রুণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন (তৃতীয় পর্য়ায়) প্রকল্প।

এছাড়া ৪৩৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্য়ক্রমের আওতায় ঢাকা বিভাগীয় অঞ্চলে প্রিপেইড-ই মিটার স্থাপন (প্রথম পর্য়ায়) প্রকল্প’, ৪০ কোটি টাকায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।