বন্দর: চীন নয়, জাপানি প্রস্তাবেই ‘ঝুঁকছে’ সরকার

মহেশখালীর মাতারবাড়িতে বন্দর নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার জাপানি প্রস্তাবে সায় দিলে সোনাদিয়ায় ৮ বিলিয়ন ডলারে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা বাদ পড়তে পারে, যা নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2015, 11:12 AM
Updated : 11 Sept 2015, 11:41 AM

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে তেমন সম্ভাবনার কথাই বলা হয়েছে।

রয়টার্স লিখেছে, বাংলাদেশ সরকার শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগের জন্য একটি বড় হতাশার কারণ হবে।   

ওই উদ্যোগের মাধ্যমে এশিয়ায় বেশ কয়েকটি বন্দরের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে তার সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করে বাণিজ্য ও প্রভাব সম্প্রসারণের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা রয়েছে চীনের।

গত বছর অগাস্টে মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার, যার সঙ্গে একটি এলএনজি টার্মিনাল ও বিশেষায়িত গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথা হচ্ছে।

মাতারবাড়ির প্রস্তাবিত এই প্রকল্প এলাকা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বিষয়ে চীনের একটি প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

পরিকল্পনামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা মাতারবাড়িতে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দর নির্মাণের জন্য ৮০ শতাংশ অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছে, যা তারা দেবে স্বল্প সুদে।  

ওই প্রস্তাব পাওয়ার পরই চীনা অর্থে সোনাদিয়া প্রকল্প নিয়ে আর এগোনোর প্রয়োজন আছে কি না- সে প্রশ্ন ওঠে।

মুস্তফা কামাল রয়টার্সকে বলেন, “মাতারবাড়ির পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল ও বন্দরকে সমন্বিতভাবে ব্যবহার করা যায়।” 

সরকার প্রস্তাবগুলো এখনো পর্যালোচনা করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “মাতারবাড়িই যথেষ্ট। আমরা হয়তো অন্য প্রকল্পটি বাদ দেব।”

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়ে জাপানের সুমিতোমো ও মারুবেনি কোম্পানি ইতোমধ্যে প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দর ( প্রি-কোয়ালিফিকেশন) ডাকা হলে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানই তাতে অংশ নেয়।

সুমিতোমোর একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কোনো সিদ্ধান্তই এখনো ‘চূড়ান্ত হয়নি’। আর মারুবেনির কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জাইকার পক্ষ থেকে রয়টার্সকে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের একটি ঋণ চুক্তি হয়েছে এবং প্রকল্পটি বর্তমানে ‘দরপত্র’ পর্যায়ে রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব শামসুল আলমকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র  ও বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে  শূন্য দশমিক ১ শতাংশ সুদে ৩.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে আগ্রহী জাইকা, যার মেয়াদ হবে ৩০ বছর।

আর জাইকা অর্থায়নের প্রস্তাব দেওয়ায় সরকার মাতারবাড়ি বন্দরের দিকেই ‘এগোচ্ছে’ বলে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।

অবশ্য চীনকে দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে মনে করার কোনো কারণ নেই মন্তব্য করে নৌমন্ত্রী বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেইজিং বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।  

সোনাদিয়া বন্দর প্রকল্প নিয়ে দৌঁড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। গতবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় এ বিষয়ে আলোচনাও হয়।  

কিন্তু অর্থায়নের পরিমাণ নিয়ে দর কষাকষিতে বিষয়টি আর এগোয়নি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়।